কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে চলছে হকার উচ্ছেদ অভিযান। এহেন পরিস্থিতিতে ফের প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের সভাঘরে এদিনও ব্যাপক তিরষ্কার করলেন কাউন্সিলরদের। ধমকের আওতা থেকে আজও বাদ পড়লেন না কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বললেন, 'গড়িয়াহাটে তো হাঁটারই জায়গা নেই।'
গড়িয়াহাটে তো হাঁটারই জায়গা নেই: মমতা
রাজ্যজুড়ে হকার উচ্ছেদ অভিযান চলছে। রাস্তা দখল করে বেআইনি ভাবে যেসব দোকান রয়েছে, সব উচ্ছেদ করা হচ্ছে বুলডোজার চালিয়ে। গত ২৪ জুন রাস্তা সাফ করার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। তারপর থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছে প্রশাসন। আজ ফের রণংদেহী মূর্তিতেই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। রীতিমতো ধমক দিয়ে বললেন, 'একই জায়গায় গায়ে গায়ে ঠেসে ঠেসে দোকান। গড়িয়াহাটে তো হাঁটারই জায়গা নেই। আমি গড়িয়াহাটের এপারের অংশের কথা বলছি না। হকার বাজারটা মনে রাখবেন, দেখতে সুন্দর করতে হবে। নিউ মার্কেট এলাকাও ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে। কর্পোরেশনের গায়ে পর্যন্ত হকার বসে গিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা চোখে দেখেও দেখে না। অনেকে বলছে, তাদের সরিয়ে দেওয়া হোক। আমি বলছি, একটা আলাদা জোন দেওয়া হোক। চিড়িয়াখানার পাশে যাঁরা বসছিল, তাঁরা ফুটপাতটাও দখল করে নিয়েছে। রাস্তায় বসছে। তাতে সমস্যা হয়। ফুট ওভারব্রিজ করা হল। লক্ষ লক্ষ লোক আসে চিড়িয়াখানায়। সবাই যে জেনুইন কীভাবে বলবেন, এই তো দেখলেন, বাংলাদেশের এমপি-কে এনে খুন করে দিয়ে চলে গেল। পুলিশও আমি চেঞ্জ করতে পারছি না, কারণ বছরের প্রতি দিনই প্রায় ইলেকশন। সিস্টেমটাকেই ব্রেক করে দিচ্ছে। সরকারি জমি দখল করে বাড়ি করছে। যখন টেক ওভার করছি, চলে যাচ্ছে কোর্টে। অর্ডার নিয়ে চলে আসছে। কোর্টকে ভাল করে বোঝাতে হবে। আমরা কোর্টকে বোঝাতে ব্যর্থ। মলয় ঘটককে নির্দেশ, একটা বৈঠক করতে হবে, সঙ্গে মেয়র ডেপুটি মেয়র দুজনেই যাবে। বার কাউন্সিলর, বার অ্যাসোলিয়েশনকে নিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, আর অরূপ যেতে হবে। দমকলকে সার্ভে করতে হবে।'
'ডাবগ্রামে দেখেছেন, আমি জেলা প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি'
এরপরেই কাউন্সিলরদের তুলোধনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'সব মিউনিসিপ্যালিটি একই নিয়মে চলবে। রাস্তা দখলে কাউন্সিলরদের অনেক দোষ রয়েছে। তাঁরা ভাবছেন, রাস্তা দিয়ে দিচ্ছি, টাকা পেয়ে যাচ্ছি, মাসে চাঁদা পেলাম, তেমনটা করলে কিন্তু হবে না। ডাল ভাত তরকারি খেয়ে কি হচ্ছে না? তাতে সন্তুষ্ট থাকা যাচ্ছে না? এখন তো বাড়িতে লোকে মিষ্টিও নিয়ে যায় না। পাশে ডায়বেটিস হয়ে যায়। মানুষের বাঁচার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকুই করুন। লোভ করা ভালো নয়। লোভ সংবরণ করুন। এক্ষেত্রে লোকাল নেতা পুলিশ সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্রথমে বসাচ্ছেন, তারপর বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করতে যাবেন, আমি একদম বরদাস্ত করছি না। প্রথম থেকেই পদক্ষেপ করতে হবে। ডাবগ্রামে দেখেছেন, আমি জেলা প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি।'
একমাস বন্ধ থাকবে উচ্ছেদ অভিযান
হকারদের উদ্দেশ্যে মমতা নির্দেশ দিলেন, একমাস সময় দেওয়া হচ্ছ। এরমধ্যে উচ্ছেদ হবে না। এরমধ্যে রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'হকারদের একমাস সময় দিচ্ছি এর মধ্যে সব গোছাতে শুরু করুন। রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের সার্ভে চালু থাকবে। আপনাদের কোথায় জায়গা দেওয়া যায়, তা সরকার দেখবে। গোডাউনের ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু রাস্তা দখল করা যাবে না।'