শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ চালাচ্ছে, তবে এই সব কিছুর মধ্যেই সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে ভারত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে। ভরা বর্ষায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে পদ্মার ইলিশ আমদানি। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আগে বাংলাদেশের মানুষ ইলিশ পাবে। এরপরেই রফতানি হবে দেশের বাইরে। ফরিদা আখতারের এমন বয়ানের পরই পুজোর সময় বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে আদৌ কি এই বছর পুজোয় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এপার বাংলায় আসবে?
২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের তরফ থেকে অন্যান্য দেশে ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকলেও শুধুমাত্র ভারতে মাছ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। হাসিনা সরকার গত ছয় বছর ধরে পুজোর সময় উপহার হিসাবে এপার বাংলাকে ইলিশ দেওয়ার প্রচলন চালু করে। তবে প্রতিবছর এমন উপহার পেতে ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিতে হয়। কিন্তু এবার সরকার পরিবর্তন হওয়ার ফলে চিঠিতে কাজ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অতীতে এই মাছ আদান-প্রদানের ফলে ভারত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের এই সমস্যার কারণে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, ত্রিপুরাতেও ইলিশের আকাল দেখা গেছে।
কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের তরফ থেকে ইলিশ মাছ এখন আমদানি হচ্ছে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই ইলিশ মাছের দাম অত্যাধিক বেড়ে গেছে। এই মুহূর্তে ১ কেজি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তাও অবৈধভাবে আসছে যেগুলি। আর কিছুদিন পর এই মাছগুলিও পাওয়া যাবে না। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অজয় সাহা গত সপ্তাহে বলেন, ‘আমাদের অনুমান অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন বাংলাদেশের প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা হয়, এখানে এখন কোনও কিছুই হচ্ছে না।’
বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে কি খবর রয়েছে সেই বিষয়ে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কোন খবর নেই। ঠিক সেই রকমই আবার ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, তারা এই বছরও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিঠি দেবেন। তবে তার ফলাফল কত দূর পাওয়া যাবে তা তাদের জানা নেই। ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদের কথায়, '২০১২ সালে ইলিশ রপ্তানির উপর বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তারপর আমরা অনেক জায়গায় আবেদন করি। কিন্তু, কিছু হয়নি। গত ছয় বছর ধরে আমরা পুজোর জন্য উপহার পাই ইলিশ। এই রীতিটা চালু হয়েছিল। প্রত্যেক বছর আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ইলিশ দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিই। কিন্তু, এবার চিঠি দেওয়ার আগেই বাংলাদেশে ক্ষমতা বদল হয়েছে। বাংলাদেশে যে সরকার গঠন হবে তাদের চিঠি লিখে ইলিশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব সংগঠনের পক্ষ থেকে। বিষয়টি ভারত সরকারকেও জানানো হবে।' অর্থাৎ দুর্গাপুজোয় আদৌ ইলিশ মিলবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কিছুতেই কাটছে না।
পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৭৫ ভাগ ইলিশ রফতানি করে থাকে। আসলে বাংলাদেশের পদ্মা এবং বাংলাদেশের দখলে থাকা সমুদ্রে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদিত হয় তা বিশ্বের অন্য কোথাও হয় না। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন করে থাকে বাংলাদেশ। আর এই বিপুলসংখ্যক ইলিশ তারা বিশ্বের বহু দেশে সরবরাহ করে ইলিশের স্বাদ মিটিয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশের ইলিশ স্বাদে অতুলনীয় হওয়ার কারণে চাহিদাও থাকে ব্যাপক।