আরজি করে উদ্ধার হেডফোনেই হত্যা-রহস্যের পর্দাফাঁস। রাত ৩টের পর, গলায় ইয়ার ফোন ঝুলিয়ে সেমিনার রুমের ফ্লোরে ঢোকে সিভিক ভলান্টিয়ার। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি। আরজি করের চিকিৎসককে সম্ভবত খুনের পর ধর্ষণ করা হয়। এমনটাই দাবি করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ঘুমের মধ্যে প্রথমে খুন করা হয়ে থাকতে পারে আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে। মৃত্যুর পর সম্ভবত ধর্ষণ করা হয় তাঁকে। পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই সম্ভবত চিকিৎসককে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত। এখনও পর্যন্ত সঞ্জয় রায় ছাড়া এই ঘটনায় আর কারও যোগ মেলেনি, দাবি পুলিশের।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ও এখনও পর্যন্ত একমাত্র ধৃত, কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় অতীতেও একাধিক বার এই ধরনের অপরাধ ঘটিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রেই এখন জানা যাচ্ছে। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক সরকারি হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা এবং মহিলা পুলিশকর্মীদের ফোনে অশ্লীল মেসেজ পাঠানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও কেউ তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেননি বলেই দাবি।
আরজিকর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য। জানা গিয়েছে, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে রিপোর্টে। রাত ৩টে থেকে সকাল ৬টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। তরুণী চিকিৎসকের গলার একটি হাড় ভাঙা। তাই প্রাথমিক অনুমান, গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। শরীরের মোট দশ জায়গায় ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। যৌনাঙ্গেও রক্ত পাওয়া গিয়েছে বলে খবর সূত্রের। অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল ওই তরুণীর দেহ। চার তলার ওই সেমিনার হলের কাছে কোনও নিরাপত্তারক্ষীও ছিল না বলে জানা গিয়েছে। এদিন সকালে মৃতের পরিবারের তরফেও ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলা হয়। ইতিমধ্যেই, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের সিট গঠন করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত চলছে। অন্য কোনও ধারা এখনও যুক্ত হয়নি।
এদিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে চিন্তা বাড়ছে রোগী থেকে রোগীর পরিজনদের মধ্যে। রোগীর পরিজনদের একটা বড় অংশ বলছে, এখনও স্বাভাবিক হয়নি পরিষেবা। যদিও সকলেই চাইছেন দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক, সেই সঙ্গে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক হাসপাতাল। রবিবার সকাল থেকেই আরজি কর সপাতাল চত্বরে আবার বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা। মাঠে নেমেছে RAF। আসছেন পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা। ইতিমধ্যেই আরজি করের নিরাপত্তা নিয়ে উঠে গিয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। অভিযোগ, সন্ধ্যা নামতেই আরজি করে চলছে অন্ধকারের রাজত্ব। হাসপাতালের পিছনের অংশে যেখানে একাডেমিক বিল্ডিং, প্লাটিনাম বিল্ডিং রয়েছে সেই সব জায়গায় আলোর থেকে অন্ধকারই বেশি। বড় বড় লাইট থাকলেও তা জ্বলে না বলে অভিযোগ।
চাপের মুখে দুই চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে আরজি করে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘটনার রাতে দায়িত্বে ছিলেন ওই দুই নিরাপত্তারক্ষী। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হল তাঁদের। তরুণী চিকিৎসক খুনে নিরাপত্তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। সেই আবহেই সাসপেন্ড করা হল দুই নিরাপত্তারক্ষীকে।