Buddhadeb Bhattacharya Passes Away: ১৯৪৪ সালে উত্তর কলকাতার যে পরিবারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন, সেই পরিবারের আর এক বিখ্যাত মানুষ হলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য, যিনি সম্পর্কে বুদ্ধদেবের কাকা। ১৯৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলায় স্নাতক হন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বুদ্ধদেবের প্রয়াণ রাজ্যে বাম জমানার একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবসান হল নিঃসন্দেহে। আজ ভোরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ডাক্তাররা।
'পরিবর্তন'-এর বুদ্ধদেব
'The world is changing, so our policies need to change with the world।' ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বিবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথম রাতেই যেন বেড়াল মেরেছিলেন! তখন ইতিমধ্যেই রাজ্যবাসী দু'দশকের বেশি সময় বাম শাসন দেখে নিয়েছে। জ্যোতি বসু স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আলিমুদ্দিনের নীতিগত বেশ কিছু পরিবর্তন দরকার। পরিবর্তন দরকার রাজ্যেও। এখন, সেই নীতি কতটা ভুল ছিল বা কতটা ঠিক, কতটা তাড়াহুড়ো, সে বিষয়ে আলোচনা অন্য বিষয়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে জ্যোতি বসুর ক্যাবিনেটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বেও। জ্যোতি বসুর অত্যন্ত স্নেহের ও ভরসার পাত্র ছিলেন।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো
১৯৪৪ সালে উত্তর কলকাতার যে পরিবারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন, সেই পরিবারের আর এক বিখ্যাত মানুষ হলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য,যিনি হলেন সম্পর্কে বুদ্ধদেবের কাকা। ১৯৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলায় স্নাতক হন। স্কুলজীবনে এনসিসি-তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও তিনি এনসিসি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজ জীবনেই ছাত্র রাজনীতির সূত্রে সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন তিনি। ধীরেধীরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিপিআই(এম)-এর পলিটব্যুরো সদস্যও হন। রাজনীতিবিদ ছাড়াও কবিতা, সাহিত্য জগতে অবাধ বিচরণ ছিল বুদ্ধদেবের।
বিতর্কের বুদ্ধ-- সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম
সমালোচকরা বলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একাধিক সদিচ্ছা থাকলেও তাঁর নীতিতে বিস্তর ভুল ছিল। তারই খেসারত দিতে হয়েছে বামফ্রন্টকে। যার নির্যাস, সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা। সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা গড়ার তাড়াহুড়ো এবং তা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বৃহত্তর আন্দোলন। আবার নন্দীগ্রামে ২০০৭ সালে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। যদিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, 'আমি তখন বিধানসভায়। এখনও আমার মনে আছে, ঘরে এসে বসলাম, শুনলাম গুলি চলে গেছে। একটু পরেই বলল, ফিগারটা ১৪। খুব খারাপ লাগল। পরে দেখলাম, ফায়ারিংয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, বাকি ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্য ভাবে। নন্দীগ্রামে মাওবাদী ও তৃণমূলরা একসঙ্গে বসে যা করছিল, সেগুলির ভাল তদন্ত হওয়া উচিত।'
প্রবীণ সাংবাদিক রজত রায় একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ২০১১ সালে বলেছিলেন, 'বহু দিন ধরেই জাতীয় স্তরে বাঙালি ভদ্রলোকদের একটা চেহারা খুব পরিচিত-- ধুতি, পাঞ্জাবি পরা, ধীরে কথা বলা। এগুলোই দেশের মানুষের কাছে নিপাট ভদ্রলোকের পরিচয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও সেই চোখেই দেখেন জাতীয় স্তরের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম। কিন্ত জাতীয় স্তরে কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা তিনি তৈরি করতে পারেননি জ্যোতি বসুর মতো। আর বিজেপি বা কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীদের বাহবা পেয়ে তাঁদের উদারীকরণের পথে চলতে গিয়ে নিজের দলের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন।