ফি বছর আটচালায় দুর্গা আসেন কলকাতায়। কিন্তু সোনাগাছির প্রতিমায় তেমন বিশেষত্ব থাকে না। কিন্তু এ বার পুজো অন্যরকম। সোনাগাছিতে থাকবে থিমের প্রতিমা। পুজোর মুখ যৌনকর্মীরাই। কারণ অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও তারকাকে রাজি করানো যায়নি। মুখ ফিরিয়েছেন সকলেই। তাই পুজোর মুখ যৌনকর্মীরাই। পুজোর থিম, 'আমাদের মুখ আমাদের পুজো।'
এবছর এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লী সোনাগাছির পুজোর ১১ বছর। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির ব্যানারে-পোস্টারে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর হিসেবে দেখা যাবে নায়ক-নায়িকাদের ছবি। সোনাগাছিরও ইচ্ছে ছিল, কোনও নামী তারকাকে পুজোর মুখ হিসেবে হাজির করার। কিন্তু কেউ রাজি হননি, তাই যৌনকর্মীদের পুজোয় মুখ এবার যৌনকর্মীরাই!
যৌনকর্মীদের সংগঠন 'দুর্বার মহিলা সমিতি'র সভানেত্রী বিশাখা লস্কর বলেন, প্রতিবছর আমরা আলাদা আলাদা থিম করি। সেই থিমে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের বার্তা থাকে। এবছর মনে করছি, আমাদের পুজোয় আমরাই মুখ হব। এটা আমাদের আত্মপ্রকাশ।'
বিশাখা জানান, আগামী ৩০ অগাস্ট সোনাগাছির দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজো। সেদিনই উদ্বোধন করা হবে এই পুজোর ফ্লেক্স ব্যানারের। শহরের বিভিন্ন জায়গায় এবার পুজোর প্রচারে দেখা যাবে 'দুর্বারের দুর্গাদের।'
দুর্বারের সদস্যদের বক্তব্য, সমাজ যতই সচেতন হোক না কেন, এখনও যৌনকর্মীদের ‘পতিতা’ হিসেবেই দেখে সমাজের বড় অংশ। তাই মুখে যতই সকলের উৎসব বলা হোক এই পেশায় যুক্তদের উৎসবের সঙ্গে যোগ থাকে না বললেই চলে। কিন্তু তা নিয়ে তাঁদের কোনও আক্ষেপ নেই। তাই নিজেদের পুজোর মুখ নিজেরাই হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোনাগাছির বাসিন্দাদের কাছে দুর্গাপুজো সত্যিই লড়াইয়ের। ২০১৩ সালে প্রথমবার পুজো হয়। কিন্তু নতুন পুজোর অনুমতি নিয়ে সমস্যা হয়। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে পুজো করা সম্ভব হয়। পরের বছরও একই রকম সমস্যা তৈরি হয়। সে বার একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘরের ভিতরে পুজোর অনুমতি মেলে। ২০১৫ সালেও পুজোয় বাধা আসায় প্রতিবাদে উৎসবে অংশ নেয়নি সোনাগাছি। পরের বছর ফের পুজোর উদ্যোগী হলেও প্রশাসনিক বাধা আসে। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে পাওয়া আদালতের নির্দেশে সোনাগাছিতে দুর্বারের অফিসবাড়ির সামনে ডালপট্টির মোড়ে পুজো শুরু হয়।
দুর্বার জানিয়েছে, শুধু কলকাতাতেই নয়, এখন যৌনকর্মীদের উদ্যোগে বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর আসানসোল, বসিরহাটের যৌনপল্লিতেও দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু কলকাতার অন্য পল্লিতে পুজো হয় না। তবে সোনাগাছির পুজো অনেক বড়। রামবাগান, শেঠবাগান, রবীন্দ্রসরণি, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, পলাতক ক্লাব এলাকায় যত যৌনকর্মী রয়েছেন তাঁরা সরাসরি এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত।