Advertisement

করোনার ধাক্কা দুর্গাপুজোয়, কমেছে বিজ্ঞাপনদাতা, আয়োজনে কাটছাঁট

মহামারীর কারণে আর্থিক ধাক্কা লেগেছে দুর্গাপূজোতে। বিজ্ঞাপনদাতার অভাবে পুজোর আয়োজনে পুজোকর্তারা অনেকটাই কাটছাঁট করেছেন। দেখা যাচ্ছে, শুধু ছোট নয়, বড় পুজোগুলিওও তাদের বাজেট প্রায় ৩০% থেকে ৫০% কমাতে বাধ্য হয়েছেন। থিম, সাজসজ্জা, জৌলুস এবার যেন অনেকটাই ফিকে।

ফোটো: তাপস বাইরি
মনোজ্ঞা লইয়াল
  • কলকাতা,
  • 25 Oct 2020,
  • अपडेटेड 10:25 PM IST
  • মহামারীর কারণে আর্থিক ধাক্কা দুর্গাপূজোয়
  • কমেছে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা
  • অনেক কিছুই বাদ দিতে হয়েছে

অনেক কিছুই বাদ দিতে হয়েছে এবার। তা সে প্রতিমার আকার হোক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঢাকি, স্টল বসানো। গত বছরের তুলনায় সব কিছু কমিয়ে আনা হয়েছে।
অবসর সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সহ-সম্পাদক কেতন ঠাক্কর বলেছেন, 'এটি সবাইকে প্রভাবিত করেছে। কেবল বেসরকারী সংস্থাগুলিই নয়, আয়োজকরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। আয়োজকরা বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ না পেলে বড় পূজা আয়োজন করা সম্ভব নয়। এ বছর বিজ্ঞাপনটি অনেক কমে গিয়েছে। পূজা কমিটিগুলি বিজ্ঞাপনের দামও কমিয়ে দিয়েছে। এ বছর কম বিজ্ঞাপন এসেছে। এরপর যখন আমরা জানতে পারলাম, আদালত মণ্ডপে দর্শনার্থীদের আসা নিয়ে কিছু নির্দেশ দিয়েছে, তখন সেটা আরও একটা ধাক্কা দিয়েছিল। মণ্ডপগুলি এমনভাবে তৈরি হয়েছিল যাতে সেগুলি দৃশ্যমান হয়। বেসরকারী সংস্থাগুলির প্রচুর ক্ষতি হতে চলেছে।'
৫ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা ও মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলির আয়োজন করে কলকাতার থিমভিত্তি প্যান্ডেল তৈরি করতে ১২ লক্ষ থেকে ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে মণ্ডপের আকার এবং মাপের ওপর।
কেতন আরও জানান, এই বছর আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, আমরা আশা করেছিলাম, টিকা পাওয়া যাবে। তবে কেউ জানতেন না যে এটি এত সময় নেবে, এটি কখন শেষ হবে তা কেউ জানে না। এমনকি পরের বছরও অন্য কোনও কিছুতে মন বসানো খুব কঠিন।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা মদন মিত্র বলেছিলেন, 'ভাগ্যক্রমে এবং ঘটনাক্রমে আমি ৩০০টি দুর্গা পূজা কমিটির সঙ্গে যুক্ত। দুর্গাপূজা কোনও ব্যবসা নয়। তবে এটা ঠিক কথা পুজোর সময় বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা উপার্জন করেন। অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ সারা বছর ধরে পুজোর জন্য অপেক্ষা করেন। যাতে তাঁরা কিছু উপার্জন করতে পারেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে দুর্গাপুজো দেশের বৃহত্তম উৎসব এবং পূর্বের এক নম্বর উৎসব হলেও কেন্দ্র তার দিকে কোন নজর দেয়নি। খালি বড় বড় কথা আর রাজনীতি করেছে। খুব দুর্ভাগ্যজনক। মমতা ব্যানার্জি যদি পুজোকমিটিগুলিকে ৫০,০০০ টাকা করে না দিতেন, তা হলে এই মণ্ডপ তৈরি করা সম্ভব হত না। কারণ আমরা কোনও অনুদান নিচ্ছি না। কোন চাঁদা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। আপনি আমাদের স্পনসরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সমস্ত স্পনসর ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী, আমি আপনাকে কেবল স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ভুলে যাবেন না বাংলায় ১০ কোটি মানুষ রয়েছেন। আমাদের এভাবে উপেক্ষা করবেন না।'
ছোট, কম বাজেটের দুর্গাপূজা কমিটিগুলি আরও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা কোনও থিমের আয়োজন করেনি। অনেক সাদামাটা ভাবে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। 
বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির মতে, দর্শক সংখ্যা কম থাকাও বিজ্ঞাপন না-দেওয়ার অন্যতম কারণ।
মদনবাবু আরও জানান, এই পুজোর আয়োজন করা খুব চিন্তার। কারণ এটি খুব বড় বাজেটের পূজা নয়। এর জন্য খরচ হয়েছে ১৫-২০ লক্ষ টাকা। এ বছর ক্লাবের সদস্যরা ২ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করার মতো জায়গায় ছিলেন না। আমি আবার অবশ্যই মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি ক্লাবগুলিকে ৫০,০০০ টাকা করে না দিলে প্রতিমা কেনাও সম্ভব ছিল না।
দেশের আর্থিক মন্দার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতৃত্ব অবশ্য তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-কে দায়ী করেছে।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের কাছে খাবার কেনার অর্থ নেই। এই কঠিন সময়ে স্পনসরদের প্রত্যাশা করা ঠিক ধারণা নয়। আয়োজকরা কোনও ভাবে মণ্ডপ তৈরি করতে পেরেছিলেন। আমরা তো পূজো উদযাপন করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারি না। তবে এই ভাল যে মানুষ কোভিড -১৯-এর মধ্যে ঘরে ছিলেন। পুজোর সময় বিক্রিবাটা মার খেয়েছে। এই সময় ১ লক্ষ কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়। বাংলা এটার উপর নির্ভরশীল। আপনি যদি বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থানকে দেশের সঙ্গে তুলনা করেন তবে এটি জাতীয় হিসেবের থেকে অনেক ভাল।'
জেলার যে কারিগররা আসতেন, তাঁরা আসতে পারছেন না। লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ বলে জেলা থেকে খুব বেশি মানুষ আসেননি।
ফিরহাদ বলেন,'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনও বিশেষ দলের নেতা ছাড়া কিছুই নয়। তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য দুর্গাপূজার কথা মনে রেখেছিলেন। ৭ বছর হয়ে গেল তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন। তবে এতদিন হয়ে গেলেও দুর্গাপূজা নিয়ে কখনও ভাবেননি। তিনি যা বলেছেন তা সঠিক ছিল না। যদি তিনি বাংলার বিষয়ে চিন্তা করতেন, তবে তাকে ৫৩,০০০ কোটি টাকা দিয়ে দিতেন। যা রাজ্যের পাওনা এবং দীর্ঘদিন ধরে আমরা চাইছি। তাঁর লড়াই মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে নয়। তাঁকে বাংলায় জনগণ ও তাঁদের উন্নয়নের মুখোমুখি হতে হবে। এটা তো এমন নয় যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে কেবলমাত্র আমরা তখনই কেন্দ্রীয় সরকার থেকে এই পাওনা মিটিয়ে দেবে। বাংলার মানুষ কর দিচ্ছেন। এই অর্থ অন্য কারও নয়, এটি বাংলার মানুষের টাকা। তিনি মহিলাদের নিরাপত্তার কথা বলছিলেন। তা হলে তাঁকে উত্তর প্রদেসের হাথরসের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইব।'

Advertisement

কলকাতার এক বিজ্ঞাপন সংস্থার সিএমডি অতুল ডালমিয়া নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন। তিনি বলেন, 'বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হচ্ছে। আউটডোর বিজ্ঞাপনের বাজেটে কাটছাঁট হয়েছে। এখন আমরা যা আয় করছি, তা ডিজিটাল মিডিয়া থেকে। আউটডোর হোল্ডিং এবং পুজোর গেট সংখ্যা অনেক ছিল। তবে তা কমে হয়েছে ১৫%। । যাঁরা বিজ্ঞাপন দিতেন, তাঁরা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। কমছে বিক্রিও। প্রধানমন্ত্রী মোদি আশ্বাস দিয়েছিলেন খুব শিগগিরি টিকা পাওয়া যাবে। টিকা না আসা পর্যন্ত বাজারের অবস্থা একই রকম থাকবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আরও ভাল অবস্থা প্রত্যাশা করছি।'

Advertisement

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement