মহারাষ্ট্র (Maharshtra)-এর হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা শুনে থমকে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার ধনঞ্জয় পাল, হাওড়ার অমিতাভ সেনগুপ্তরা। আবার একই জিনিস? হুঁশ ফিরবে কবে? দ্রুত শাস্তি হয় না বলেই এই অবস্থা। ঘুরেফিরে তাঁদের মনে এই কথাগুলোই আসছিল।
এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী তো তাঁরাও ছিলেন। আমরি (AMRI)-র অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। অগ্নিকাণ্ডে হারিয়েছেন প্রিয়জনকে। তাঁরা ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। যেখানে সুস্থ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। কেউ ভর্তি করিয়েছিলেন মাকে, কেউ নিজের মেয়েকে। তাঁদের আক্ষেপ, স্থান-কাল বদলালেও মানুষের দুর্দশা সেই একই রয়েছে। পরিকাঠামোর দিকে খেয়াল রাখার কথা মনে নেই। সকলেই ব্যস্ত নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে অথবা লাভ করতে।
মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা জেলার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে দেশকে। সেখানে সরকারি হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কী কারনে এই দুর্ঘটনা তার তদন্ত হচ্ছে। ওই ঘটনার রেশ আছড়ে পড়েছে সুদূর বাংলায়।
১০ বছর আগে এমনই এক শীতের দিনে কেঁপে গিয়েছিল দেশ। এমনই ঘটনা ঘটেছিল কলকাতায়। এক বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লেগে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে বেশির ভাগই রোগী। দোষীদের শাস্তি দিতে মামলা আন্দোলন সবই হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পরিজনের বক্তব্য,শাস্তি কবে হবে তা জানা নেই।
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী ধনঞ্জয় পাল। তিনি থাকেন বাঁকুড়ার জয়পুরে। পা ভেঙে গিয়েছিল ১৩ বছরের মেয়ের। তার চিকিৎসা চলছিল আমরি হাসপাতালে। যেদিন রাতে আগুন লাগে, সেদিন তিনি সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। আগুন লেগেছে বা কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পেরেছিলেন। সেখানকার কর্মীদের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করেন, ওপরে যাওয়ার অনুমতি দিন। ওপর তলা থেকে মেয়েকে নামিয়ে আনি। কিন্তু তারা সেই অনুমতি দেয়নি।
ফলে আরও অনেকের মতো তাঁর মেয়েরও মৃত্যু হয়েছিল। এদিন তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপণ নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চলা খুব একটা কঠিন নয়। মহারাষ্ট্রের ঘটনা দেখিয়ে দিল সামান্য জিনিস মেনে চলতে কী অনীহা! একটু নিয়ম মেনে চললে একদুলো মানুষ সন্তান হারাতেন না। যাঁরা সন্তান হারিয়েছেন, তাদের সমবেদনা দেওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
তিনি বলেন, একই অভিজ্ঞতা আমারও রয়েছে সুস্থ হতে গিয়েছিল। আর বাড়িতে ফিরল না। তবে সচেতনতার পাশাপাশি দরকার দ্রুত শাস্তি। যাতে নিজেদের গাফিলতি বোঝা যায়। না হলে এই ঘটনা ঠেকানো যাবে না।
অমিতাভ সেনগুপ্তর মা রেবা সেনগুপ্ত ভর্তি ছিলেন ওই হাসপাতালে। তাঁর বাড়ি হাওড়া শিবপুরে। আমরির অগ্নিকাণ্ডে তিনি তাঁর মাকে হারিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, কোনও টাকা বাকি থাকলে বা পরের দিন কোনও পরীক্ষা রয়েছে এমন হলে, গভীর রাতেও হাসপাতালে তরফ থেকে ফোন আসতো। কিন্তু ওইদিন, দুর্ঘটনার সময় বা তারপরে কোনও ফোন আসেনি। পরিবারের সদস্যদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তারা। ঘটনার কথা জানতে পেরে ট্যাক্সি নিয়ে সেখানে পৌঁছে যাই। হাসপাতাল তো অন্তত জানাতে পারত।