রবিবারই রাতেই রাজভবনে ফিরেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জানা যাচ্ছে, রাজ্যের বকেয়া ইস্যুতে আজ, সোমবার তিনি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। প্রসঙ্গত, কলকাতার রাজভবনে রাজ্যপালের দেখা না পেয়ে ধর্নায় বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাদে তৃণমূলের সব শীর্ষ নেতারাই সেই ধর্না মঞ্চে গিয়েছেন। এদিকে ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও রাজভবনের সামনে কীভাবে বিক্ষোভ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল নেতৃত্বের ধর্না চলাকালীনই এই চিঠি দিয়েছেন তিনি। এর মাঝেই সোমবার ফের রাজ্যের শাসকদলের প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের সময় দিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস। বিকেল ৪টের সময় এই সাক্ষাৎ হতে পারে। এমনটাই জানা যাচ্ছে সংবাদসংস্থা ANI সূত্রে।
রবিবারই দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফেরেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কলকাতায় ফিরে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, রাজভবনের দরজা সবার জন্য খোলা। ভোর ৪টে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি আছেন। যে কেউ চাইলে এসে দেখা করতে পারেন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য কেউ আগাম সময় চাননি। রবিবার রাতে দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরলেও রাজভবনের বাইরে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ চেয়ে ধর্নায় বসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। রাজভবনের উত্তর গেটে ধর্না দিচ্ছেন অভিষেক। সেই পথ এড়িয়ে রবিবার দক্ষিণ গেট দিয়েই রাজভবনের অন্দরে চলে যান রাজ্যপাল।
রবিবার দুপুর থেকেই রাজভবনের সামনে থেকে অভিষেকের ধরনা সরানোর জন্য নবান্নের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। কী ভাবে ১৪৪ ধারা এড়িয়ে রাজভবনের গেটের সামনে তৃণমূল নেতা ধরনা দিচ্ছেন, তা নিয়েও নবান্নকে প্রশ্ন করে রাজভবন। কারণ, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই রাজভবন চত্বরকে ১৪৪ ধারায় আওতায় আনা হয়েছে।
এদিকে বোস কলকাতায় ফিরতেই ধর্না মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরেছেন। বিকেলের দিকে তাঁর শরীর খারাপ করেছিল শুনলাম। ওনার সুস্থতা কামনা করি”। অভিষেক আরও বলেছিলেন, “উনি ফিরে এসেছেন ভাল কথা। এবার আমাদের সঙ্গে দেখা করুন। মানুষের কথা শুনুন।” যদিও গতকাল ধর্না ইস্যুতে রাজ্যপালকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, 'বিজেপি নেতারা যখন রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের নাম করে রাজভবনের উঠোনে বা লনে বৈঠক করেন বা জনসভা করেন, তখন তাঁর মনুষত্ব, দায়িত্ব, সংবেদনশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য কোথায় থাকে? ২০২১ থেকে ২৩ বার মিছিল করে বিজেপির প্রতিনিধিরা রাজভবনে এসেছেন। তখন কি ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন হয়নি? ২০২১ সালের ১০ অগস্ট বিজেপির প্রতিনিধিরা পায়ে হেঁটে রাজভবন এসেছিলেন। তখন রাজ্যপাল পুলিশকে চিঠি দেননি কেন? একইভাবে ২০২২ সালের ১২ জুলাই, ১০ অক্টোবরেও মিছিল করা হয়েছিল। তখন কেন চিঠি দেওয়া হয়নি?' এরপর অভিষেক আরও বলেন, 'আপনি তো বিজেপির রাজ্যপাল নন। আপনি বাংলার রাজ্যপাল। বাংলার প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমি বেশ কয়েকটা তারিখ উল্লেখ করলাম। এই দিনগুলিতে বিজেপির প্রতিনিধিরা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে মিছিল করেন রাজভবনের বাইরে। ১০০ জনকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। তখন রাজ্যপাল হিসেবে আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য কোথায় ছিল? আর এই ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের হয়ে লড়াই করছে বলে আপনাদের এত গাত্রদাহ? দিল্লিতে সভা করার অনুমতি দেবেন না। মন্ত্রীর অফিসে গেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। মিছিল মিটিং-এর অনুমতি নেই। প্রধানমন্ত্রী চারদিন অন্তর অন্তর ভাষণ দেন আর ট্রেন উদ্বোধন করেন... সেই ট্রেনে গরিব মানুষের যাওয়ার অধিকার নেই। এটাই আপনাদের গরিবদের নিয়ে প্রকৃত চিন্তা ভাবনা?'
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়ায় আন্দোলনে নেমেছে শাসকদল। ২ অক্টোবর দিল্লিতেও আন্দোলন করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা। সেখানে অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি তাঁরা। উলটে আটক হয়ে থানায় যেতে হয়েছিল। পরে কলকাতায় ফিরে এসে এই একই ইস্যুতে রাজ্যরপালের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।