বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁকে 'লেডি ম্যাকবেথ অফ বেঙ্গল' বলে অভিহিত করেন। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে 'সামাজিকভাবে বয়কট' করবেন বলে ঘোষণা করেন। সিভি আনন্দ বোস জানান, তিনি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও পাবলিক প্ল্যাটফর্ম শেয়ার করবেন না।
'স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়াটা পরিহাসের বিষয়। পশ্চিমবঙ্গের লেডি ম্যাকবেথ হুগলির জল ধরে রাখছেন কিন্তু নিজের কলঙ্কিত হাত পরিষ্কার করতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী রক্ষা না করে উল্টে প্রতিবাদ করছেন। রাস্তা, হাসপাতাল এবং শহরজুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে,' বলেন সিভি আনন্দ বোস।
'আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও পাবলিক প্ল্যাটফর্ম শেয়ার করব না। সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য আমি তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেব। রাজ্যপাল হিসাবে আমার ভূমিকা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে,' বলেন সিভি আনন্দ বোস।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সম্মত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকদের লাইভস্ট্রিমিং করার দাবিতে তিনি সম্মত হননি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারাধীন। সেই সঙ্গে সিবিআই-এর তদন্তের অধীনে রয়েছে। ফলে এই নিয়ে আলোচনার লাইভ স্ট্রিমিং করা নিয়মবিরুদ্ধ। তবে এর ভিডিও রেকর্ডিং করা হবে এবং তা চিকিৎসকদের কাছে থাকবে বলে জানান তিনি।
তবে তাতে রাজি হননি জুনিয়র চিকিৎসকরা। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি চিকিৎসকদের আরও একবার কাজে ফেরার অনুরোধ জানান। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, 'আমি সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারের জন্য পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত। ওঁরা বিচার চান না। ওঁরা শুধু চেয়ার চান।'
এরপরেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এই মন্তব্য করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) কুণাল ঘোষ রাজ্যপালের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জানান, রাজ্যপালের পদে থাকা কারও পক্ষে এই জাতীয় মন্তব্য অনুপযুক্ত।
'উনি রাজ্যপালের চেয়ারে বসে এই ধরনের বিবৃতি দিতে পারেন না। তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মুখ্যমন্ত্রীকে বয়কট করার মানে কী? সাংবিধানিক প্রোটোকলের অংশ হিসাবে ১৫ অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে গিয়েছিলেন। কিন্তু উনি দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন, অন্যদের সঙ্গে বসেছিলেন। রাজ্যপাল ইতিমধ্যেই দূরত্ব বজায় রেখেছেন।'
আরজি করে তরুণী ডাক্তারের নির্যাতন-মৃত্যুর ঘটনায় এখনও আন্দোলনে জুনিয়র চিকিৎসকরা। এদিকে কলকাতার তাবড় সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চাপ সামলাতে এই জুনিয়র চিকিৎসকদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁরাই কর্মবিরতিতে থাকায় চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলিতে। এর ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ডাক্তাররা তাঁদের ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন।