শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর সেখানে অন্তর্বতী সরকার পরিচালনা করছেন মহম্মদ ইউনুস। তাঁর আমলে বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। একাধিক ঘটনা তার ইঙ্গিতও দিয়েছে। সেদেশে দুর্গাপুজো জন্য মৌলবাদীরা টাকা চেয়েছে, প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্যও ফতোয়া জারি করা হয়েছে। ফলে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে শঙ্কার মেঘ দেখছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও বাংলাদেশে সংগঠিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে হিন্দুদের উপর। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট চালানো হয়েছে। এবারও সেই একই ছবি দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন 'Being Hindu In Bangladesh' বইয়ের লেখক দীপ হালদার ও অভিষেক বিশ্বাস। ওই ইংরেজি বইটির বাংলা সংস্করণ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম 'বাংলাদেশের হিন্দু হিন্দুর বাংলাদেশ।' বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুই লেখকই ওপার বাংলার হিন্দুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা যে শোচনীয় তা জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ হিন্দু ছিল। ২০২২ সালে তা নেমে আসে ৮.৫ শতাংশে। অথচ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা সেই দেশে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। ১৯৪৬-এর নোয়াখালি দাঙ্গা থেকে ২০২১-এর দাঙ্গা, এই ৭৫ বছরের বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা, তাঁদের পারিবারিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনকে তুলে ধরা হয়েছে বইতে।
৪৬-এর নোয়াখালি দাঙ্গার পরেও বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা যে খুব একটা বদলায়নি তার দলিল হিসেবে ২০২১-এর দাঙ্গায় যারা ভুক্তভোগী তাদের কথা তুলে ধরেছেন দুই লেখক। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের মানসিকতা-মনোভাব। কীভাবে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, হিন্দুরা কীভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এই ছবির সঙ্গে একই পৃষ্ঠায় জায়গা করে নিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও।
যে কোনও দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হলে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। 'বাংলাদেশের হিন্দু হিন্দুর বাংলাদেশ' বইতেও সেই একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শেখ হাসিনা মুখে বরাবর গণতন্ত্রের কথা বললেও তাঁর আমলে দুর্গাপুজোর সময় একের পর এক দাঙ্গা হয়েছে। হিন্দুদের টিকে থাকার লড়াই করতে হয়েছে। হিন্দুদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাহলে কি হাসিনা সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল? প্রশ্ন তুলেছেন লেখকদ্বয়।
লেখক দীপ হালদার বলেন, '২০২১ সালে বাংলাদেশে ৫ জনের মৃত্যু হল। একের পর এক মন্দির ভাঙা হল। হিন্দুবিরোধী দাঙ্গা ভয়াবহ চেহারা নিল। হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। সেই ঘটনা দেখে বই লেখার সিদ্ধান্ত।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে হিন্দুদের খুবই খারাপ অবস্থা। সামনেই দুর্গাপুজো। সেখানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে একাধিক ফতোয়া জারি করা হচ্ছে। বলা হয়েছে আজানের সময় মন্দিরে পুজো করা যাবে না। হিন্দুদের মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। দুর্গাপুজোর আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর চাপ বাড়ছে।'
আর এক লেখক অভিষেক বিশ্বাস বলেন, 'দেশভাগের পর যে সব মানুষদের আমরা ভারতে আনতে পারিনি, তারা বাংলাদেশে ভালো নেই। একাধিক ঘটনা তার প্রমাণ। বাংলাদেশ নিয়ে যে সব খবর আমরা পাই সেটা সবটুকু নয়। আরও অনেক ঘটনা থাকে। সেই ঘটনাগুলো না জানলে সেখানে বসবাসকারী হিন্দুদের করুণ অবস্থা আমরা আঁচ করতে পারব না। ২০২১-এর দাঙ্গা আমাদের নাড়া দেয়। বাংলাদেশকে সবার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ হিন্দুর বা মুসলমানের নয়, যে এই দেশ ভালোবাসে তার। সেই বাংলাদেশ আজও গড়ে ওঠেনি।'