লোকসভা নির্বাচনের ফল শিক্ষা দিয়েছে বিজেপিকে। তারপরই নির্বাচনী কৌশলে বড় পরিবর্তন করতে চলেছে গেরুয়া শিবির তৃণমূলস্তরে পৌঁছতে চাইছে তারা। ভবিষ্যৎকে মাথায় রেখে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং বাংলায় বদল হচ্ছে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলে। যে রাজ্যগুলি থেকে বিজেপি বেশি আসন পাওয়ার আশা করেছিল, সেখানেই তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিপর্যয়ের পর আঞ্চলিক নেতা-কর্মীদের হাতে আরও বেশি করে ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ঠিক হচ্ছে পার্টি লাইনও।
লোকসভা নির্বাচনে 'আবকি বার চারশো পার' স্লোগান দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ম্যাজিক সংখ্যাও পেরোতে পারেনি তারা। মাত্র ২৪০ আসন এসেছে ঝুলিতে। দেশে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও সরকার শরিকদের উপর নির্ভরশীল। বাংলায় ১৮টি আসন ছিল বিজেপির। সেটাই কমে হয়েছে ১২। অথচ বাংলায় ১৮-র চেয়ে বেশি আসন জেতার আশা করেছিলেন নেতৃত্ব। কিন্তু গতবারের জেতা আসনও ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। কোথায় ভুল হল? এনিয়ে পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছে নেতৃত্ব। এর মধ্যে অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এ রাজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পশ্চিমবঙ্গে কি হিন্দুত্বের কার্ডেই ভরসা রাখছে বিজেপি?
মঙ্গলবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' স্লোগান আর নয়। যাঁরা আমাদের সঙ্গে আছে, আমরা তাঁর সঙ্গে আছি। আমাদের সংখ্যালঘু মোর্চার দরকার নেই'। জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন শুভেন্দু। এনিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় শুভেন্দু অধিকারী ব্যাখ্যা দেন, প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ নীতির কোনও বদল হবে না। এটা এনডিএ সরকারের উদ্দেশ্য'।
শুভেন্দুর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে বিজেপি এখন বাংলায় হিন্দু ভোটারদের একজোট করার দিকেই নজর দেবে। বাংলার বিজেপি সূত্রের খবর, মুসলিম ভোটাররা এককাট্টা হয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু ভোটার ভাগ হয়ে গিয়েছে। সেই ভোটকে একজোট করে বিজেপির ইভিএমে আনার পরিকল্পনা করছে তারা। বলে রাখি, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ৬ জন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি।
যদিও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হিন্দুত্বের কার্ড নতুন নয়। এর আগেও বিজেপিকে হিন্দুত্বকে সামনে রেখে অগ্রসর হয়েছে তারা। ঘটনা হল, এ রাজ্যের মুসলিমরা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিই আস্থাশীল। বাম এবং কংগ্রেসও এবার মুসলিম ভোট কাটতে পারেনি। মুসলিম ভোটাররা বিজেপিকে রুখতে বাম-কংগ্রেস জোটের পরিবর্তে তৃণমূল কংগ্রেসকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ কারণে বিজেপি হিন্দু ভোটের মেরুকরণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীর মতো অনুষ্ঠানে দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ।
অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলায় 'জয় শ্রী রাম' স্লোগানকে দৃঢ়ভাবে বাংলার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। ক্রমাগত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ করেছে। নির্বাচনের আগে সিএএ এনে মতুয়া ও হিন্দুদের মন জয়ের চেষ্টায় কসুর করেনি। তার ফলও মিলেছে রানাঘাট ও বনগাঁর মতো দুই মতুয়া প্রধান লোকসভা কেন্দ্রেই পদ্মফুল ফুটেছে। বস্তুত বাংলায় হিন্দুত্বের রাজনীতি করেই বিজেপি বিরোধী দল হয়ে উঠেছে বলে বারংবার অভিযোগ করে বাম এবং কংগ্রেস। শুভেন্দু কি তাহলে সেই হিন্দুত্বের রাজনীতিকেই আরও কট্টর অবস্থানে নিয়ে যেতে চাইছেন? এটাই কি তবে বিজেপির বাংলা জয়ের রণকৌশল? জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
তথ্য- উদিত নারায়ণ
এই প্রতিবেদনটি হিন্দিতে পড়তে ক্লিক করুন- हरियाणा में OBC दांव, बंगाल में हिंदुत्व, महाराष्ट्र में पैसा... चुनावी झटके के बाद BJP बदल रही रणनीति?