যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। ওইদিন রাতে মৃত প্রথম বর্ষের ছাত্রকে তাঁর পুরুষ হওয়ার প্রমাণ দিতে বলেছিল সিনিয়ররা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছ, র্যাগিংয়ের সময় উপস্থিত সকল সিনিয়ররা মৃত ছাত্রকে সমকামী বলে উপহাস করে। এর পরে প্রথম বর্ষের ছাত্রটি ভেঙে পড়েন এবং বারবার বলেছিলেন যে 'আমি সমকামী নই, আমি সমকামী নই।' সেই সময়ে সিনিয়ররা তাঁকে সমকামী না হওয়ার প্রমাণ দিতে বলেছিল। যার পরে তাঁকে নগ্ন করা হয়েছিল। এছাড়াও হস্টেলের দু'তলার বারান্দায় তাঁকে নগ্ন করে প্যারেডও করানো হয়।
পুলিশ সূত্রের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই দাবি করেছে প্রথম বর্ষের ছাত্র তাদের সামনেই বারান্দা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। তদন্তের সময় র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে দাবি। সেই কারণে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোহিবিশন অফ র্যাগিং ইন এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনস অ্যাক্ট ২০০০-এর ৪ নম্বর ধারা যুক্ত করার জন্য আবেদন গতকাল আলিপুর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং আদালত মামলায় র্যাগিং আইনের প্রাসঙ্গিক ধারা যুক্ত করেছে।
সূত্রের দাবি, মূল হস্টেলের রাঁধুনিকে জেরা করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, প্রথম বর্ষের ছাত্রের সঙ্গে র্যাগিংয়ের সময় গ্রেফতার হওয়া ১২ জনই ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল এই র্যাগিং মামলার প্রধান অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরীকে প্রথম গ্রেফতার ও প্রধান অভিযুক্ত দাবি করেছেন। তবে সৌরভ দাবি করেছেন যে তিনি অপরাধী নন। তিনি বলেন, 'আমিও সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি গরিব, তাই সঠিক বিচার পাচ্ছি না। আমি বিচার চাই।'
পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত মনোতোষ ঘোষের ফোন থেকে প্রচুর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, হস্টেলের বারান্দা থেকে প্রথম বর্ষের ছাত্র পড়ে যাওয়ার পর একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য। সূত্রের দাবি, মূল অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরী গ্রুপের সবাইকে লিখেছিলেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে যদি পুলিশ জিজ্ঞাসা করে, তাহলে তাদের পুলিশকে বলতে হবে যে সৌরভ হস্টেলে থাকে না, তার মা ভাল নেই। তাই তিনি মাঝে মাঝে এখানে আসেন।
এই উদ্ধার হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ভিত্তিতে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর গোপাল হালদার আদালতে দাবি করেন যে অভিযুক্তরা দীর্ঘ ষড়যন্ত্র করেছে। তারা আক্ষরিক অর্থেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিকল্পনা করেছিল যে কীভাবে পুলিশি তদন্ত থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়। পাবলিক প্রসিকিউটর সৌরিন ঘোষালও দাবি করেছেন, কারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল তা পুলিশকে শনাক্ত করতে হবে। তাতে আরও অনেক কিছু উঠে আসবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রনেতা অরিত্র মজুমদারকেও যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়। অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু সন্ধ্যায় থানায় হাজির হন এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তদন্তকারী জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁকে।