মহিলা চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে উত্তাল গোটা শহর তথা দেশ। এই পরিস্থিতিতে আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন ডাঃ সন্দীপ ঘোষ। তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই নিয়ে এবার মুখ্য খুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্যের বিজেপি সভাপতি। সুকান্ত মজুমদার বলেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আছে তাঁর ( সন্দীপ ঘোষ) দিকে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এর আগেও তাকে একবার সরানো হয়েছিল আবার তাকে এনে বসানো হয়েছে। এবার তাঁকে সরানোর পর আবার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে দেওয়া হল, এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি অনেক কিছু জানেন। এনার খুঁটির জোরটা খুব সাংঘাতিক সেটা বোঝাই যাচ্ছে। খুঁটিটা কীসের সেটা দেখব আমরা আগামী দিনে।
সন্দীপ ঘোষের প্রশাসনিক ভবনে ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের তালা ঝোলানো প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ছাত্রদের একটা অসন্তোষ আছেই। উনি সেখানকার প্রিন্সিপাল আর প্রিন্সিপাল মানে প্রশাসক।
প্রশাসক হিসেবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এখন অনেক কিছু ঘটনা শোনা যাচ্ছে। ওখানে নাকি অনেক ব়্যাকেট চলতো। ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন। যতটা সহজ সরল ভাবে দেখানো হচ্ছে আমার মনে হচ্ছে না বিষয়টা ততটা সহজ সরল।
মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশকে আলটিমেটাম দেওয়া এবং সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত ভার তুলে দেওয়া মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, আপনি সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে যদি সিবিআই কে দেন, সিবিআই কী করবে? এই ধরনের রেপ এন্ড মার্ডার কেসের সারকামস্টেন্সেস এভিডেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ। দশ দিন-পনের দিন পরে পুলিশের কাছ থেকে সিবিআইকে তদন্ত দিয়ে কী হবে?
প্রসঙ্গত রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে এই ঘটনার আগেই সন্দীপ ঘোষেকে নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। লিখিতভাবে রাজ্যপালের কাছে অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন সুকান্ত। আরজি করে ডাক্তারি সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতি, টেন্ডার দুর্নীতি, ক্যান্টিন পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা-সহ একাধিক বিষয় উল্লেখ করে আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বিরুদ্ধে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে সবিস্তারে চিঠি লিখেছিলেন সুকান্ত মজুমদার।
এদিকে ডাঃ সন্দীপ ঘোষকে অধ্যক্ষ করায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে । ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল ছাত্রদের একাংশ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে সন্দীপ ঘোষের নিয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। প্রসঙ্গত জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্রমাগত আন্দোলনের চাপে সোমবার সকালে পদত্যাগের ঘোষণা করেন আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। বিকেলে স্বাস্থ্যভবন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করে। আর এত দিন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যালে যিনি অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই অজয়কুমার রায়কে বদলি করা হল স্বাস্থ্য ভবনে। সেখানে তিনি ওএসডি হিসাবে কাজ করবেন। সেই পদ অধ্যক্ষের পদমর্যাদারই। আর আরজি করের অধ্যক্ষ করা হয় সুহৃতা পালকে। ঘটনাচক্রে, তিনি এত দিন স্বাস্থ্যভবনের ওএসডি পদে ছিলেন। স্বাস্থ্যভবনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই নির্দেশ এখন থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই ক্ষোভের আঁচ ছড়ায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।