ধনতেরাস, কালীপুজো, দীপাবলি, ভাইফোঁটা... বছরের এই সময়টা উৎসবের মরসুম। অফিসে ছুটি নিয়ে অনেকেই বেড়িয়ে পড়েন। অনেকে আবার আত্মীয়দের বাড়িতেও যান। সঙ্গে উপহার, খেলনা থেকে মিষ্টি কী না থাকে! এমন প্ল্যান থাকলে সাবধান! অতিরিক্ত লাগেজের কারণে পকেট থেকে খসে যেতে পারে মোটা টাকা। অতিসম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে স্পাইসজেটে সওয়ার হতে গিয়েই এমন অভিজ্ঞতারই সম্মুখীন হয়েছেন যাত্রীরা। কলকাতা থেকে দিল্লির বিমানে ওঠার ঠিক আগে যাত্রীদের লাইনে হঠাৎ এক বিমানকর্মী ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে হাজির হন। অধিকাংশ যাত্রীর কাছে এ ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। তারপর কেবিন ব্যাগ, যাত্রীদের ল্যাপটপ থেকে শুরু করে মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগেরও ওজন মাপা হয়। এরপর অতিরিক্ত প্রতি কেজিতে ৫০০ টাকা করে যাত্রীদের কাছ থেকে 'জরিমানা' নেন সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার কর্মীরা।
বিমান ধরার আগে চেক ইন করার সময় বা বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় চেক-ইন লাগেজ এয়ারলাইন্স কাউন্টারে রেখে দেন যাত্রীরা। সেই সময়ে লাগেজের ওজন মাপার রীতি। কিন্তু এবার যা ঘটল, তা বেনজির! যাত্রীরা আক্ষেপ করছেন,যদি জানতেন যে স্পাইসজেটে নিয়মের এত কড়াকড়ি তাহলে অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ নিয়ে আসতেন না। উৎসবের সময় ২-৪ কেজি অতিরিক্ত ওজনে ছাড় দেওয়া যায় না? ১৫ কেজি পর্যন্ত চেক-ইন লাগেজের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু যাঁদের কাছে চেক-ইন লাগেজ নেই, তাঁরা কী করবেন? যে যাত্রীর ১৫+৭=২২ কেজি পর্যন্ত লাগেজ নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। তাঁকে ১০ কেজি কেবিন ব্যাগের জন্য প্রতি কেজিতে ৫০০ টাকা দিতে হয়। অতিরিক্ত ৩ কেজির জন্য খরচ করতে হবে ১৫০০ টাকা।
নিয়ম কী বলছে?
প্রতিটি উড়ান সংস্থা যাত্রীদের একটি নির্দিষ্ট ওজন পর্যন্ত লাগেজ নিয়ে ভ্রমণ করতে দেয়। সাধারণ নিয়ম বলছে, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ১৫ কেজি চেক-ইন লাগেজ এবং সর্বোচ্চ ৭ কেজি কেবিন লাগেজ নিয়ে দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন। চেক-ইন মানে বিমানের লাগেজ কেবিনে আপনার লাগেজ আলাদা করে রাখার জায়গা থাকে। গন্তব্যে পৌঁছনোর পর বিমানবন্দরে কনভেয়ার বেল্ট থেকে সেটা সংগ্রহ করতে হয়। আর কেবিন লাগেজ মানে যা আপনি বিমানে উঠার সময় হাতে নিতে পারেন। কেবিন লাগেজের জন্য ওজন থেকে শুরু করে ব্যাগ বা ট্রলির আকার ঠিক থাকে। অনেকেই কনভেয়ার বেল্ট থেকে লাগেজ সংগ্রহের সময় বাঁচাতে চান। তাই কেবিন লাগেজ নিয়েই সফর করতে পছন্দ করেন। ছোট ট্রলি বা হ্যান্ডব্যাগ থেকে ল্যাপটপ পর্যন্ত কেবিন লাগেজের জন্য বৈধ।
নিয়মের কঠোরতা নাকি 'অতিরিক্ত আয়'!
এই ঘটনার সময় অনেক যাত্রীই চাইছিলেন, অতিরিক্ত ওজনের জিনিসপত্র চেক-ইন লাগেজে জমা দিতে। কিন্তু সেই সুযোগ পাননি। কয়েকজন যাত্রীর অনুরোধে বিমান সংস্থার কর্মীরা স্মিত হেসে বলেন,'এখন আর সময় কোথায়? তাঁদের হাসি দেখে অনেক যাত্রীর মনে হয়েছে, ভাবটা এমন যেন আর কোথায় যাবেন? যাত্রী-অসন্তোষের মুখে বিমান কর্মীরা যুক্তি দেন,সব জায়গাতেই ওজন মাপার যন্ত্র রয়েছে। যে কোনও জায়গায় মাপতে হতে পারে। অর্থাৎ পরের বার বিমানযাত্রা করলে বাড়িতেই লাগেজের ওজন করে নেওয়া শ্রেয়।
বিমান সংস্থার সঙ্গে জড়িতরা কী বলছেন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার কর্তা বলেন,'দুই দশকের কেরিয়ারে কেবিন লাগেজের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা শোনেননি। কোনও যাত্রীর কেবিন লাগেজে অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা চেক-ইন লাগেজ হিসেবে বুক করা হয়। এজন্য একটি রসিদ কেটে দেন বিমান কর্মীরা। যাতে কনভেয়ার থেকে সেটি ফেরত নিতে পারেন।
স্পাইসজেটের কী বক্তব্য?
সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করেছে স্পাইসজেট। তারা জানিয়েছে, নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পালন করে সংস্থা। নির্ধারিত সীমার মধ্যে লাগেজের ওজনে থাকলে অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হয় না। কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্পাইসজেটের পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।