করোনার পর থেকেই কলকাতায় কমছে বেসরকারি বাসের সংখ্যা। বিভিন্ন বাসমালিক সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী ৭-৮ হাজার বাস চলত কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে। এখন চলছে মাত্র ২-৩ হাজার বাস ও মিনিবাস। নতুন বাস আর পথে নামতে পারছে না। সেইসঙ্গে, বিগত সাত বছর ধরে বাড়ানো হয়নি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের ভাড়া। চলতি মাসের প্রথমদিকে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনকে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছে ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’।
কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করে তা নোটিফিকেশন দিয়ে জানাতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। সঙ্গে রাজ্যের সব জেলায় যে ভাবে টোল ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তা নিয়েও নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন বাস মালিকরা। পাশাপাশি, অস্বাভাবিক হারে পুলিশ বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের উপর জরিমানা আরোপ করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংগঠনটির সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, 'হু হু করে বাস কমছে। কোভিডের পর থেকেই বেসরকারি বাস কমছে। সরকার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। সিএনজি চালিত বাস নামাবে বলছে, কিন্তু কোনও উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। কৃষির পর সবথেকে বড় ক্ষেত্র হল পরিবহণ শিল্প। এখানে বহু মানুষ কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের কথা রাজ্য সরকার ভাবছে না। অ্যাপ ক্যাব বড়লোকদের জন্য, গরিবের যানবাহন আজও বাস। এর প্রতি সরকারের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন বলেই আমরা মনে করি।'
অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'গাড়ি বাতিল হচ্ছে। কিন্তু নতুন গাড়ির পারমিট মিলছে না। ২০১৮ সালের পর থেকে আর ভাড়া বাড়েনি। আদালতে মামলা করেছি। কলকাতা ও শহরতলিতে প্রায় ৪ হাজার বাস চলছে। রুট কমছে। কলকাতা, হাওড়া দুই ২৪ পরগণা ২০০ রুট ১৩০ হয়েছে। ৫০-৬০ রুট কমেছে। বালি খাল থেকে ধর্মতলা ৫০টা বাস চলার কথা। চলছে ৩৫টা। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে যা হবে ২৫টি। গরিব মানুষের পরিবহণ হল বাস। কিন্তু গরিবের কথা ভাবছে না সরকার।'
শিয়ালদা, ধর্মতলা, শ্যামবাজার, সর্বত্রই বাস কম। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, যেসব বাস পাঁচ-দশ মিনিট অন্তর আসার কথা, সেইসব বাস আসছে অন্তত পঁচিশ-তিরিশ মিনিট দেরিতে। জরিমানা-বিধি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং বাসমালিকদের টানাপড়েনে দিশাহারা যাত্রীরা। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠন সূত্রে খবর, বেলতলা মোটর ভেহিক্লসে ছ’মাসে প্রায় ৫০০ বেসরকারি বাস বাতিল হবে। হাওড়া মোটর ভেহিক্লসে বাতিল হবে প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো গাড়ি। হাওড়ায় এমন রুটও রয়েছে, যার ৭০ শতাংশ গাড়িই বসে যাবে। আলিপুর এবং বারাসত মোটর ভেহিক্লসেও অনেক গাড়িও বাতিল হবে।
এদিকে পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী দিনে মূলত ‘সিএনজি’ ও বিদ্যুৎচালিত বাসই চলবে কলকাতায়। ইতিমধ্যেই কোচবিহার-শিলিগুড়ি রুটে সিএনজি-চালিত বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কলকাতায় এখন মেট্রো সম্প্রসারিত হচ্ছে। শহরতলিতে অল্প গন্তব্যের পথে টোটোর দাপট বেড়েছে। হাওড়া থেকে বাসের পরিবর্তে মেট্রোয় কলকাতা আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। বাস মালিকরা ২০০৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিসংখ্যান দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও অনেক বাস বসে গেছে।
আগে অ্যাপ নির্ভর ক্যাব এত ছিল না। এখন নতুন মেট্রো চালু হয়েছে। টোটো-ই-রিকশা অ্যাপ বাইক আসায় বাস নির্ভরতা কমেছে। কিন্তু বেসরকারি বাস মিনিবাসের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের দাবি, রাজ্য সরকারের সদ্দিচ্ছা ও নীতির অভাবেই বেসরকারি বাস ধুঁকছে বাংলা জুড়েই। বিষয়টিতে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। প্রতিক্রিয়া মিললে এই প্রতিবেদনে তা যুক্ত করা হবে।