আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নিহত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের বাবা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, তাঁর মেয়েকে হয়তো সেমিনার হলের বাইরে অন্য কোথাও হত্যা করা হয়েছে। এবং পরে তাঁর লাশ সেখানে আনা হয়েছে। সেমিনার হলের পাশের চিকিৎসকদের ঘরের কাছে বাথরুম সংলগ্ন দেওয়ার ভাঙার পর এই মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকের বাবা। যে ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে, যা আরও প্রশ্ন তুলেছে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে।
শনিবার সাংবাদিকদের নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, 'আমরা পুলিশের ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি এবং সিবিআইকে জানিয়েছি। সেমিনার হলে তাকে খুন করা হয়েছে কিনা আমরা এখন সন্দেহ করছি। তাকে অন্য কোথাও খুন করা হতে পারে।' তিনি আরও বলেন, 'আমি চাই হাসপাতাল বিভাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তদন্তকারী দলের ওপর আমাদের আস্থা আছে।'
৯ অগাস্ট ভোরবেলা ৩১ বছর বয়সী ওই চিকিৎসকের দেহ সেমিনার হলের কাছে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা প্রাথমিকভাবে ধর্ষণ ও হত্যার নির্দেশ দেয়। তবে, নিহতের বাবা-মা অভিযোগ করেন যে সেমিনার হলটি অপরাধের মূল স্থান নাও হতে পারে এবং সেখানে লাশ আনা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এদিকে, বুধবার রাতে হাসপাতাল চত্বরে জনতার হামলার ঘটনাও তদন্তের আওতায় রয়েছে। হামলাকারীরা মূল ভবনের জরুরি ওয়ার্ড, প্রথম তলা, এবং দ্বিতীয় তলার ইএনটি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। এই হামলার কারণে অপরাধের দৃশ্য ধ্বংস করার অভিযোগও উঠেছে। যদিও সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, হাসপাতালের পুনর্গঠনের কাজটি ডাক্তারদের বিশ্রামাগার তৈরির জন্য করা হচ্ছিল, তবে এই সময়ে সেই কাজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
শুক্রবার, নিহতের বাবা-মা সিবিআইকে জানান যে, তাঁরা মনে করেন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। এবং তারা হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন ও চিকিৎসকের নামও উল্লেখ করেন, যারা হাসপাতালে তাঁর মেয়ের সঙ্গে কাজ করতেন। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, নিহত চিকিৎসকের পরিবার তাদের বলেছে যে, তাঁরা তাঁদের মেয়েকে হত্যার পিছনে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সন্দেহ করছেন। তাঁরা কয়েকজন ইন্টার্ন এবং ডাক্তারের নাম দিয়েছেন যারা হাসপাতালে তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন।"
এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সিবিআই তদন্তের প্রক্রিয়া এখনও চলছে এবং তারা এখনো তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
ঘটনার পর থেকে রাজ্যজুড়ে এবং দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও দোষীদের শাস্তির দাবি তোলার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।