কলকাতা তো বটেই, কলকাতা সংলগ্ন শহরতলিতে এই প্রাণান্তকর গরমেও হচ্ছে লোডশেডিং। দিনভর ঝলসানো গরমে এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা শহরবাসীর। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের বিদুৎ দফতর এবং সিএসসিই সূত্রে খবর, বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষমতা না বাড়িয়েই নতুন এসির সংযোগ নিচ্ছে বহু মানুষ। যেকারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে চাপ বাড়ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মার্চ এবং মধ্য এপ্রিলের মধ্যে পৃথক মিটারের লোড ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২৭,৪৩৭টি আবেদন পেয়েছে। কিন্তু মধ্যে মাত্র ১৬,৬১২টি আবেদনই সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিল দিয়েছেন।
এয়ার-কন্ডিশনার এবং অন্যান্য গ্যাজেট যোগ করার জন্য গ্রাহকরা তাদের মিটার আপগ্রেড করছে না। যার জেরেই ঘন ঘন লোডশে়ডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ। কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার অনুমোদনের বাইরে এসি ব্যবহার করছে বলে জানা যাচ্ছে।
পাশাপাশি সিইএসই চলতি বছরের মার্চ এবং মধ্য এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৪০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত লোডের জন্য ৩৪,৮৫০টি আবেদন প্রক্রিয়া করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত ১০ দিনে শহরের সর্বোচ্চ চাহিদার থেকেও প্রায় ১৯২ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎতের চাহিদা ছিল। রাজ্য বিদ্যৎ দফতর বেশ কয়েকটি পকেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যা এখন কার্যত কলকাতার অংশ - যেমন সল্টলেক, নিউ টাউন, টালিগঞ্জ এবং গড়িয়া। লোড বৃদ্ধির জন্য বেশিরভাগ আবেদন এই এলাকাগুলো থেকে এসেছে বলে ডব্লিউবিএসইডিসিএলের একজন অফিসার জানিয়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে সল্টলেক, নিউটাউন, গড়িয়া, বাগুইআটি, সোনারপুর, নরেন্দ্রপুর, বারাসাত, ব্যারাকপুর এবং হাওড়ার কিছু অংশ থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগে অনেক ফোন গেছে ডব্লিউবিএসইডিসিএলের দফতরে। এই এলাকায় এসি ব্যবহারের হার বেশি। অ-অনুমোদিত লোড ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বলেই মনে করছে দফতরের কর্মীরা।
যদিও আগের মতো এ দিনও সিইএসসি-র তরফে দাবি করা হয়েছে, অনুমোদনহীন এসি-র অতিরিক্ত লোডের কারণে কলকাতা সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত দু’-একটি ওভারলোডিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্মীরা দ্রুত সেখানে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করেছেন বলে দাবি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার। যদিও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁদের অভিজ্ঞতা একেবারেই তেমন নয়।
দু'দিন আগে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েন টালিগঞ্জের একাংশের বাসিন্দারা। রাতে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেখানে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছিল কয়েক দিন ধরে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গোটা পরিবার নিয়ে মাঝরাত পর্যন্ত ছাদে কাটাতে হয়েছে তাঁদের। বেলঘরিয়াতেও রাত হলে ফ্যান চলছে খুবই ঢিমেতালে। কখনও কখনও লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ভোল্টেজ আপডাউন চলছে সবসময়।