কলকাতা পুলিশের সিপি বিনীত গোয়ের পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। পদত্যাগ পত্র জমা দিতেও তিনি চেয়েছিলেন। এমনটাই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকে। বিজেপি-সহ সব রাজনৈতিক দল তো বটেই, ডাক্তাররাও গোয়েলের পদত্যাগের দাবি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তাঁর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে এসেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'অনেকে যে যা পারছেন বলে যাচ্ছেন। পুলিশকে নিয়ে নহু কথা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তারাও আপনাদের মতো মানবিক, মানুষ। তাদের সংসার আছে। পরিবার আছে। যাকে পারছেন যা খুশি বলছেন কেউ কেউ। এটা একদম ঠিক নয়। একবারও ভাববেন না আপনার পরিবারকে যদি বারবার কেউ বলে তাহলে আপনাপ মানসিকতা কী হবে সেটা বুঝতে পারছেন? কলকাতা পুলিশ কমিশনার সাত দিন আগে আমার কাছে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে এসেছিলেন। সামনে পুজো, আইন প্রশাসন তো জানতে হবে। পুলিশকে তো জানতে হবে সবাইকে। কিছুদিন ধৈর্য ধরলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হবে? আপনারা ডিমান্ড দিচ্ছেন। সেই মোতাবেক কাজ করছি। আপনারা যা দাবি দিচ্ছেন, সব তো করা সম্ভব নয়।'
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কেউ কেউ বলছে তিনি নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা অফার করেছিলেন। তবে সেটা ঠিক নয়। দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, 'অনেকে বলছেন আমি টাকার কথা বলেছি। আমি মোটেই বলিনি। আমাকে প্রমাণ দেখাক, কোথায় আমি টাকার কথা বলেছি। মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। এগুলি অপপ্রচার, চক্রান্ত।” মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগেই চিকিৎসক সংগঠনের থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি বাবা-মাকে যা বলেছিলাম তা হল, দেখুন, মৃত্যুর বিকল্প টাকা হয় না। আপনারা খুব মর্মাহত। আমরাও মর্মাহত। কিন্তু যদি কোনও দিন মনে করেন, আপনার মেয়ের স্মৃতিতে কোনও ভাল কাজ করবেন, আমাদের বলবেন। সরকার পাশে আছে।'
পুলিশের প্রশংসাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, পুলিশকে আন্দোলনে মারা হয়েছে। তারপরও পুলিশ শান্ত থেকেছে। তিনি বলেন,'আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে কি না, সেটা পুলিশ দেখবে না? ভাগ্যিস পুলিশ এই কটা দিন সামলেছে। শান্তিপূর্ণ থেকেছে। মার খেয়েছে। নিজেদের রক্ত দিয়েছে, কিন্তু কারও রক্ত নেয়নি। পুলিশেরও সংসার আছে, তাঁদেরও পরিবার আছে।'
সিআইএসএফ অভিযোগ করেছিল, তাদের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। তা নিয়েও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, পর্যাপ্ত জায়গা থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে জওয়ানদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, 'পুলিশের হাত থেকে সবটা কেড়ে নিতে চান। এটা কেন্দ্রের চক্রান্ত। কেন্দ্রীয় সরকার ও বামেদের চক্রান্ত আছে। আমরা কিছু পাল্টা করছি না বলে এক তরফে হয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা জেগে পুলিশ পাহারা দেয়, দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে, দুর্ঘটনা ঘটলে পাহারা দেয়। কিন্তু প্রতিদিন রাতে যদি রাস্তায় থাকেন তাহলে তো অনেকের ডিস্টার্ব হয়। অনেক মানুষ ঘুমোতে পারেন না। একমাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। এখন সাজা সিবিআই-এর হাতে। আসল কেসটা করুন। যে ভিকটিম তার পরিবারকে বিচার দিন।'