তদন্তের গতি বাড়াতে তদন্তকারী আধিকারিকদের সংখ্যা বাড়াতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ-সহ অন্যান্য ইউনিটের রদবদল হতে চলেছে। বর্তমানে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্জেন্টদের ইনভেস্টিগেটিং অফিসার বা তদন্তকারী আধিকারিকের দায়িত্বে আনা হতে পারে বলে খবর। পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের সমস্ত ডেপুটি কমিশনারদের অধীনে কর্মরত তদন্তকারী আধিকারিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্জেন্টদের নামের তালিকা এবং তদন্তকৃত মামলার বিবরণ চেয়ে পাঠিয়েছে লালবাজার। ওই তালিকায় ৭ জন ইন্সপেক্টর এবং ১৩৫ জন সার্জেন্ট পদমর্যাদার আধিকারিক-সহ নাম রয়েছে মোট ১৪২ জনের। ডিসিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্তকারী আধিকারিক হিসেবে তাঁদের নাম বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কলকাতা পুলিশের পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও মামলার তদন্তকারী আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারতেন শুধুমাত্র সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররাই। সাব-ইন্সপেক্টরদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে, সমপদমর্যাদার আধিকারিক হওয়া সত্ত্বেও তদন্ত করতে পারতেন না সার্জেন্টরা। ২০১৮ সালে এই নিয়মে বদল আনতে উদ্যোগী হন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে তিনি জানতে চান, সার্জেন্টদের তদন্তকারী আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত করলে কোনও আইনি বাধা আছে কিনা। নবান্নের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক এবং অন্যান্য ইউনিটে কর্মরত মোট ১৪২ জন সার্জেন্টকে দুই দফায় তদন্তকারী আধিকারিকের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১০ দিনের প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষায় পাশ করার পর ১৪ দিনের প্র্যাকটিকাল হয়। এরপর বিভিন্ন থানায় কর্তব্যরত বহু সার্জেন্ট মামলার তদন্তকারী আধিকারিক হওয়ার সুযোগ পেলেও, ট্রাফিক, হেডকোয়ার্টার্স ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স, ওয়ারলেস ব্রাঞ্চ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের মতো বিভিন্ন ইউনিটের কর্তব্যরত সার্জেন্টরা তদন্তভার পাননি। ফলে বহু আধিকারিকদের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, চার বছর আগে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেই সার্জেন্টদের এবার পুরোপুরি তদন্তের কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। এজন্য শুক্রবার সমস্ত ডেপুটি কমিশনারদের লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তাঁদের অধীনে কর্মরত কতজন সার্জেন্ট আজ পর্যন্ত কটা এবং কী কী মামলার তদন্ত করেছেন। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে লালবাজারে জমা দিতে হবে এই রিপোর্ট। ডিসিদের পাঠানো এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্জেন্টদের তদন্তকারী আধিকারিক হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে লালবাজার।
কলকাতা পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স, ওয়ারলেস ব্রাঞ্চ, পিটিএস, স্পেশাল ব্রাঞ্চের মতো বিভিন্ন ইউনিটগুলি অসংখ্য গুরুদায়িত্ব সামলালেও সরাসরি মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। ফলে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও এই ইউনিটগুলোতে কর্মরত সার্জেন্টরা তদন্তের সুযোগ পাননি। এবার নয়া উদ্যোগের ফলে সেই সমস্ত সার্জেন্টদের নিয়ে আসা হতে পারে থানা, গোয়েন্দা বিভাগ-সহ বিভিন্ন তদন্তকারী ইউনিটে। মূলত ২০১৪ সালের পর সাব-ইন্সপেক্টর পদে কলকাতা পুলিশে আর কোনও নিয়োগ হয়নি। অথচ এই বিগত ৮ বছরে বহু সাব-ইন্সপেক্টর পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। মামলার পাহাড় জমলেও বাড়ন্ত তদন্তকারী আধিকারিকের সংখ্যা। সেই চাপ সামাল দিতেই লালবাজারের এই উদ্যোগ বলে পুলিশ সূত্রের খবর।