যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। এখন বুদ্ধদেব সাউ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য। তিনি গণিতের অধ্যাপক। যদিও রাজভবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নতুন উপাচার্যের ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের একাংশ। বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। সেসবের মধ্যেই এবার বুদ্ধদেবকে উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে নাম না করে রাজ্যপালকে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার মেয়ো রোডের জনসভায় দলনেত্রী মমতা বলেন, 'এখন তো মাথার ওপর একটা ছাতা দাড়িয়ে গেছে। আমি তাঁর চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তিনি যে কার্যকলাপ করছেন। তা আমি সমর্থন করি না। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। সব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দেখুন টালমাটাল অবস্থা। নিজের বন্ধুকে এনে বসিয়ে দিয়েছে উপাচার্য করে। আইপিএস, কোনওদিন ট্রেনিংই নেয়নি। ১০ বছর অধ্যাপনা করতে হয় ভিসি হতে গেলে। তাঁকে এসে বসিয়ে দিয়েছে উপাচার্যের চেয়ারে। যাদবপুরে বিজেপি সেলের প্রেসিডেন্টকে বসিয়ে দিয়েছে ভিসি করে। এটা কি মগের মুলুক নাকি।'
রাজ্যেপালের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, 'আপনার এক্তিয়ারে আমরা যাচ্ছি না। দয়া করে আমাদের এক্তিয়ারে আসবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন আপনি আর চিফ মিনিস্টার এক নন, আপনি নমিনেটেড, আর আমরা ইলেক্টেড। পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর দাঙ্গাকে কমিউনাল করার চেষ্টা করবেন না।'
পাশাপাশি মমতা অভিযোগ, 'আমি শুনছি এখান-ওখান থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। রাজভবনে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোন তৈরি করা হয়েছে। নামে নামে কল যাচ্ছে। যাকে ইচ্ছে ডেকে পাঠাচ্ছেন।' উল্লেখ্য, জানা যাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব জাতীয়তাবাদী শিক্ষক এবং অধ্যাপকদের সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শিক্ষক মহাসঙ্ঘ’-এর সভাপতি।
সংগঠনটি ‘বিজেপিপন্থী’ অধ্যাপক সংগঠন বলেই পরিচিত। যদিও এই সংগঠনের কোনও অস্তিত্ব নেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, যাদবপুরে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (আবুটা)-র হিসাবরক্ষক (ট্রেজ়ারার) পদে রয়েছেন বুদ্ধদেব। ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ ইউনিভার্সিটি প্রফেসর্স অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েবকুপা)-এরও হিসাবরক্ষক পদে ছিলেন তিনি। এখন অবশ্য ততটা সক্রিয় নন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন বুদ্ধদেব। এর পর ২০০০ সালে তিনি এমটেক পাশ করেন ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট’ থেকে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই পিএইচডি করেছেন বুদ্ধদেব। তা শেষ হয় ২০১২ সালে। এর মধ্যেই ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেকচারার’ ছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিনিয়র লেকচারার ছিলেন। পরের তিন বছর রিডার হিসাবে ছিলেন যাদবপুরে। এর পর ২০১২ সালে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হন বুদ্ধদেব। কারও কারও অভিযোগ, বুদ্ধদেববাবুর এইচ ইনডেক্স পয়েন্ট নয়। আই-তেন ইনডেক্সও নয়। অ্যাকাডেমিক্সের দিক দিয়ে যা খুবই দুর্বল।