তৃণমূলের প্রবীণ-নবীন টানাপোড়েনে প্রবল অস্বস্তিতে দল। এর মাঝেই গত সোমবার তৃণমূলের কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। তৃণমূল ভবনে পতাকা উত্তোলন করে তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই লোকসভা ভোটে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলনেত্রীর নীতি আদর্শের উপর ভিত্তি করে এই লড়াই চলবে। তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত বক্সির বক্তব্য নিয়ে দলের অন্দরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর এর মাঝেই সুব্রত বক্সির পাশে দাঁড়াতেই দেখা গেল মন্ত্রী ফিরবাদ হাকিমকে। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ই শেষ কথা। কোথাও যাচ্ছে না দলের রাশ। দলে প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্বের জল্পনার মধ্যেই মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করলেন ফিরহাদ। পুরমন্ত্রী বলেন, "দলের রাশ আমার মনে হয় কোনও জায়গায় যাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা।"
প্রসঙ্গত, ফিরহাদ হাকিম নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পন্থী বলে রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে পরিচিত। তিনি নেত্রীর উপরেই আস্থা রাখছেন। মঙ্গলবারও পরিষ্কার এই কথাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি। উল্লেখ্য, গতকাল তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসেই নবীন-প্রবীণ ইস্যুতে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাগযুদ্ধ চরমে ওঠে। দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের আবহের মধ্যে সুব্রত বক্সী বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতের রাজনীতিতে আমাদের সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিকভাবেই এই নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি লড়াই করেন, নিশ্চিতভাবে আমার ধরনা, তিনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সামনে রেখে লড়াই করবেন। এবং জোড়াফুলকে সামনে রেখেই লড়াই করবে এব্যাপারে নিশ্চিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক যিনি আছেন, একত্রিত লড়াই করে বাংলার বুক থেকে বিজেপি ঠেকিয়ে দেবে। এই প্রত্যাশা আমাদের আছে।" সুব্রত বক্সীর এই মন্তব্যকে আবার একহাত নেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন,"অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলেই আছেন। তৃণমূলেই থাকবেন। এই অভিষেক পিছিয়ে যাবে না, এই বাক্যগঠনটা বোধহয় পুর্নবিবেচনা প্রয়োজন। অভিষেকের পিছিয়ে যাওয়ার কথাটা আসছে কী করে? আমার মনে হয়, এই বাক্য়গঠনটায় কোনও একটু সমস্যা আছে। অভিষেক পিছিয়ে যাবে না, মানেটা কী? ও তো নেতা, নেতৃত্ব দিচ্ছে।"
এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, সুব্রত বক্সি দলের সভাপতি, বিভিন্ন জেলার দলীয় দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা করার অধিকার তার আছে। এটা তার দায়িত্ব ও কাজের মধ্যেই পড়ে। এই দায়িত্ব পালন করার জন্যই তাকে ওই দলীয় পদে রাখা হয়েছে। সুব্রত বক্সির কাজ নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে তার পাশেই দাঁড়ান রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ বিষয়ে ফিরাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূল কংগ্রেসে দলের সাংগঠনিক রাশ কি শীর্ষ নেতৃত্বের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ বলেন, দলের রাশ কোথাও যাচ্ছে না। দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই দলের সাংগঠনিক রাস ধরা আছে। তার নির্দেশে এবং নেতৃত্বেই দল সংগঠিত ভাবে এগিয়ে চলেছে। ফিরহাদকে প্রশ্ন করা হয় দলীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে জেলা নেতৃবৃন্দের কাজকর্ম নিয়ে একের পর এক বিতর্ক কি জন্য শুরু হচ্ছে? উত্তরে ফিরহাদ বলেন, দলে কোন বিতর্ক নেই। বিভেদ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দল পুরোপুরি সঙ্ঘবদ্ধ। দল বড় হলে সেখানে আলাপ আলোচনা হবেই তা বলে দলের শৃঙ্খলা থাকবে না এমনটা নয়।