নীতি আয়োগের বৈঠকের রেশ এবার রাজ্য বিধানসভায়। সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মাইক বন্ধ করার অভিযোগে তুলে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। নিন্দা প্রস্তাব আনেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা। আর তা আনতেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা। তৃণমূলের নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হন বিজেপি বিধায়করা। তাঁরা ওয়াক আউট করেন।
এদিকে, বিধানসভায় আজ বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে কী হয়েছে তা জানান। মুখ্যমন্ত্রী জানান নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠন এবং বাংলায় জলবণ্টন নিয়ে কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নীতি আয়োগের বৈঠকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গঠন করা নিয়ে কথা বলে এসেছি। বাংলা হল নৌকার মতো। সব জল আমাদের রাজ্যে এসে পড়ে। আর আমাদের ভুগতে হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বলে এসেছি।' এছাড়াও তিনি জানান, ইন্দো-ভুটান নদী কমিশনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রক এবং অর্থ মন্ত্রকের কাছে একটি বিধানসভার দল পাঠাবেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, 'তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার।'
বাজেটে বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'বন্যার জন্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে টাকা দেওয়া হল। আমাদের দেওয়া হল না। ভুটান জল ছাড়লে কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয়। রাজ্যকে জানানো হয় না। বন্যায় বাংলার বনভূমি, চা-বাগান ভেসে যাচ্ছে প্রতিবছর।'
বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বাংলা ভাগের প্রসঙ্গও তুলেছেন। মালদা-মুর্শিদাবাদ ভাগ, উত্তরবঙ্গ ভাঙার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মমতা বলেন, 'ভোট চলে গেলেই ভাগাভাগি ইস্যুকে নিয়ে আসা হয়। উত্তরবঙ্গের জন্য বিজেপির কিছুই করার নেই। কেউ মালদা মুর্শিদাবাদ, কেউ কোচবিহারকে আলাদা করার কথা বলছে। আবার কেউ বলছেন, অসমের তিনটি জেলাকে নিয়ে নতুন কিছু করো। কেউ আবার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে বলছেন। প্রতিবছর উত্তরবঙ্গে বন্যা হচ্ছে। ডিভিসির জলে দক্ষিণবঙ্গ ভাসে। এটা কেন্দ্রের দেখার কথা। কিন্তু দেখে না। আমি আগেও চিঠি লিখেছি এ নিয়ে। এমনকি ফারাক্কা ও তিস্তা চুক্তি নিয়েও চিঠি লিখেছি। বাজেটে বাংলা বঞ্চিত। অসম, বিহার সিকিম পেয়েছে। বাংলা পায়নি। কারণটা আমি জানব। বিজেপি বলে উত্তরবঙ্গ তাদের। অথচ বাজেটে বঞ্চিত। যখন উত্তরবঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তখন বিজেপি ওয়াক আউট করছে। এটা লজ্জা। আবার তিস্তা চুক্তি করছে।'
মমতা আরও বলেন, 'নীতি আয়োগের সভায় আমার চার মিনিটের বক্তৃতায় আমি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর জল বণ্টন চুক্তির নবায়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। তার আগে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। প্রতিনিধি দলে একজনও বাংলার লোক নেই। ভুগতে হয় কাদের? কেন সিকিমে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হল? তিস্তা নদী ও উত্তরবঙ্গের সংকট। বাংলাকে বঞ্চিত করে এমন কোনও চুক্তিতে আমি একমত হতে পারি না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করে আপনি কীভাবে ফারাক্কা নিয়ে আলোচনায় যেতে পারেন? উত্তরবঙ্গ থেকে এত আসন পেল, তবু বাজেটে কিছু দিল না। এখন আবার বিভাজনের রাজনীতি করছে। আমি আশা করি তারা করবে। তিস্তায় জল কম। এরপর বাংলাদেশকে দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষ খাবার জল পাবে না। আমরা প্রতিবাদ করছি বলে ভাগ করার চেষ্টা। আমরা মানব না। ফারাক্কার ওপর পশ্চিমবঙ্গের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল> বাংলাদেশকে যা দেওয়া সম্ভব দিয়েছি। যা পারব না তার জন্য কোনও আপোষ করব না। আমার নাকের ডগা দিয়ে আমারই জল নিয়ে যাবে? না দক্ষিণ না উত্তরবঙ্গ কেউ এটা মানবে না। গঙ্গার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় সড়ক। ফারাক্কা ব্যারেজের কোনও হেলদোল নেই। আগে চুক্তির সময় জ্যোতি বাবুর মতামত নেওয়া হয়েছিল। এর জন্য বাংলাদেশে জ্যোতি বসুকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। ফারাক্কা কোনও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে না। ডিভিসি ড্রেজিং করে না। অল্প অল্প জল ছাড়লে বন্যা হয় না।
কিন্তু একসঙ্গে ১০০ বা ১৫০ কিউসেক জল ছাড়লে বন্যা হবেই। আমার চেক ড্যাম আর জল ধরো জল ভরোর পুকুরে জল ভরে যাওয়ায় কিছুটা বন্যা আটকানো গেছে। ডিভিসির বন্যা ম্যান মেড বন্যা। আমরা বন্যা আটকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ডিভিসি উদ্যোগ না নিলে কিছু হবে না।'