পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা। কোথাও ব্যালট নিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা আবার কোথাও হল বোমাবাজি। হল রক্তপাতও। সকাল থেকে দফায় দফায় এই ছবি দেখল রাজ্যবাসী। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ভোট হল না সন্ত্রাসমুক্ত। ফলে প্রশ্নের মুখে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা।
শুক্রবার থেকেই রাজ্যে হিংসার ছবি সামনে আসতে শুরু করে। এরপর শনিবার দিনভর হামলা, বোমাবাজি, গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটে। ভোট ঘিরে এখনও পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছেন। অনেক জায়গায় ব্যালট পেপার লুট হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ব্যালট পেপারে। কোথাও জল ঢেলে ব্যালট নষ্ট করা হয়। কোচবিহারে এক যুবক ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ছবি সামনে আসে।
সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই জায়গায় জায়গায় অশান্তি শুরু হয়। মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেক জায়গায় ব্যালট পেপার লুট ও অগ্নিসংযোগের ছবি সামনে আসে। কোচবিহারের এমনই এক ভিডিও সামনে আসে। অভিযুক্ত যুবক প্রথমে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়। তারপর হাতে নিয়ে দৌড় দেয়। তবে সেই যুবককে সেই সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। ঘটনাটি মাথাভাঙ্গার। অভিযুক্তের সঙ্গে আরও একজনকে ছুটে যেতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৭ জন তৃণমূলের, একজন করে বিজেপি কর্মী, সিপিআইএম কর্মী ও কংগ্রেস কর্মী। অনেক জায়গায় গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। জানা গেছে, জেলায় জেলায় বহু সংখ্যক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই হিংসার ঘটনায় কোথায় এবং কতজন লোক মারা গেছে? মুর্শিদাবাদে-৩ জন টিএমসি কর্মী ও একজন কংগ্রেস কর্মী, কোচবিহারে একজন বিজেপি এবং একজন টিএমসি কর্মী, পূর্ব বর্ধমানে একজন সিপিএম কর্মী ও একজন তৃণমূল কর্মী, মালদায় একজন টিএমসি কর্মী, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে একজন টিএমসি কর্মী মারা গেছে।
হিংসার ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনাতেও। সেখানে ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে দেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনায় TMC এবং সিপিএম কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সিপিএমের অভিযোগ, টিএমসি কর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে এসে গুলি চালায় এবং এলাকায় ইট বৃষ্টি শুরু করে। ঘটনাটি রাজারহাট ব্লকের ২ নম্বর জাংরা হাতিয়ারা গ্রাম পঞ্চায়েতের। এর প্রতিবাদে গৌরাঙ্গ নগর স্পোর্টিং ক্লাবের বুথ নম্বর ২৬৬ এবং ২৬৭ নম্বর বুথে ঢুকে হামলা চালায় সিপিআইএম। বুথ রুম সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ।
নদিয়াতেও ব্যালট বাক্স লুট হয় বলে অভিযোগ। নদিয়ায় ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেয় গ্রামবাসী। প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। চাকদা ব্লকের গেতুগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫১, ২৫২, ২৫৩ নম্বর বুথের। সেখানে রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স লুট করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় টিএমসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদে শিমুরালি-কালীবাজার রাজ্য সড়কের মণ্ডলহাটে রাস্তা অবরোধ করে বিজেপি। অন্যদিকে গ্রামবাসীরা ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
হুগলিতে প্রার্থীর মেয়ে গুলিবিদ্ধ
হুগলির তারকেশ্বরে নির্দল প্রার্থীর মেয়েকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে টিএমসি কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, টিএমসি কর্মীরা মেয়েটির কপালে গুলি করে। ঘটনার পর মেয়েটিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল ও বোমা উদ্ধার হয়। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত তারকেশ্বরের মাল পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের টিপনা এলাকার মানুষ। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নাম পিন্টু সিং। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পিন্টু সিং অভিযোগ করেছেন যে কিছু দুষ্কৃতী তার বাড়িতে ঢুকে বন্দুকের বাট দিয়ে পুরো পরিবারকে মারধর করে। তার মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসি।
উত্তর ২৪ পরগনায় রাজ্যপালের কনভয় আটকানো হয়
উত্তর ২৪ পরগনায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কনভয় থামিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, 'আমি সকাল থেকেই মাঠে আছি। ভোট ব্যালটে হওয়া উচিত্। বুলেটে নয়।' আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, 'যখনই কোনও অভিযোগ জানানো হচ্ছে, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।' তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশেও এদিন বার্তা দেন। তিনি বলেন, 'অনেক স্থানে অশান্তি হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের আজ গণতান্ত্রিক অধিকারকে কাজে লাগাতে হবে। বের হন এবং ভোট দিন। ভোট দেওয়ার অধিকার অনুশীলন করতে হবে। আপনার ভোটের মাধ্যমেই শুধুমাত্র কোনও সমাধান করা সম্ভব।' এর পাশাপাশি তিনি বলেন, 'আজ কাউকে দোষারোপ করার দিন নয়। আজ ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার অনুশীলন করার দিন।'