দলে থেকেও নিষ্ক্রিয় তাঁরা। যাব-যাব বলেও নামছেন না রাস্তায়। এবার শোভন-বৈশাখীর ( Sovan Chatterjee)(Baisakhi Banerjee)গায়ে বিজেপি (BJP)তকমা নিয়েই চিন্তায় দল। সম্পদ না আপদ-বিপদ কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে নিয়ে কী ভাবছে গেরুয়া ব্রিগেড ?
১ সম্প্রতি সংঘাতের সূত্রপাত - কলকাতায় বিজেপির মিছিলে শোভন-বৈশাখীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘিরে শুরু হয় জল্পনা। শোনা যায়, গত সোমবারই দক্ষিণ কলকাতার গেরুয়া মিছিলে হাঁটার কথা ছিল তাঁদের। যদিও আগেই মতোই অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন তাঁরা। এরপরই দলে শোভন-বৈশাখীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সরব হয় দলের একাংশ। সূত্রের খবর,এরপরই বিজেপির কার্যালয়ে শোভনের জন্য বরাদ্দ ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
২ অনুপস্থিতি নিয়ে বৈশাখীর সাফাই- শারীরিক অসুস্থতার জেরে তিনি মিছিলে আসতে পারেননি। সেইসময় শোভনবাবু ছাড়া বাড়িতে বড় কেউ ছিলেন না। তাই শোভনবাবুও মিছিলে আসতে পারেননি। একইসঙ্গে বৈশাখী অবশ্য জানান, তিনি ও শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন।
৩ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য়- দলে বার বার শোভন-বৈশাখীর বিষয়ে প্রকাশ্য়ে মন্তব্য় করতে দেখা গিয়েছে রাজ্য় বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হননি তিনি। দল কী মিছিলে না আসার জন্য় দুজনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে চলেছে ? যার উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেন, এই বিষয়টা দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি দেখবে। যদিও পুরুলিয়ায় রাখ-ডাক না করেই দিলীপবাবু বলেছেন, ''ওনারা নতুন এসেছেন,আমাদের সুরে সুর মেলাতে পারেননি। মেলালেই ঠিক হয়ে যাবে।''
৪ শোভন-বৈশাখী বনাম দিলীপ ঘোষ- রাজ্য় রজানীতির ইতিহাস বলছে, দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন-বৈশাখী। রাজ্য়ের সদর দফতরে তাদের অভ্য়র্থনা নিয়েই মূল সংঘাতের সূত্রপাত। আমন্ত্রণে শোভনের নাম থাকলেও ছিল না বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নাম। যা দেখে চটেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। প্রথমে মুরলীধর স্ট্রিটে যাবেন না বলেই গোঁ ধরেন তিনি। পরে অবশ্য় বৈশাখীর জোরাজুরিতেই রাজ্য় বিজেপির সদর দফতরে উপস্থিত হন তারা। কিন্তু সংবাদমাধ্য়মে নিজের অপমানের কথা তাঁর আগেই প্রকাশ্য়ে বলে ফেলেন শোভনের বান্ধবী। কেন আমন্ত্রণে বৈশাখীর নাম দেওয়া হয়নি,তা নিয়ে বেশি কথা বাড়াননি রাজ্য বিজেপির কান্ডারি। উল্টে বিতর্কে আরও হাওয়া দেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন,শোভন-বৈশাখী মানে 'ভাত-ডাল'। ষেখানে শোভনদা আছেন সেখানেই বৈশাখীদি থাকবেন। এটাই সবাই বুঝে গেছে।
৫ দিলীপ দূরে ঠেললেও কাছে আনেন মুকুল- দিলীপ ঘোষের সঙ্গে ভাত-ডাল পর্বের পর থেকেই দলে থেকেও নিষ্ক্রিয় শোভন চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে আর কোনও অনুষ্ঠানেই সেভাবে দেখা যায়নি দুজনকে। যদিও দিলীপ ঘোষ দূরে ঠেললেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে শোভনের সাক্ষাৎ করান মুকুল রায়। একাধিক বৈঠকের পর দলে থেকে যান তাঁরা। এ বিষয়ে শোভনবাবু বলেন,বিজেপিতে মান নিয়ে কাজ করতে চাই। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও গেরুয়া ব্রিগেডে শোভনের সক্রিয় অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। হালফিলে কলকাতায় অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন শোভন। দলের অন্দরে রব ওঠে, এবার তবে পদ্মফুলের কাজে হাত লাগাবেন শোভন-বৈশাখী। যদিও সোমবার মিছিলে না হেঁটে সেই জল্পনায় জল ঢালেন তাঁরাই।
৬ শোভন-বৈশাখী ও সংঘের আপত্তি- সূত্রের খবর,প্রথম থেকেই শোভন-বৈশাখীকে গেরুয়া ব্রিগেডে নিতে আপত্তি ছিল সংঘ পরিবারের। এক বিবাহিত মহিলার অন্য়ের বান্ধবী বলে নিজেকে দাবি করাকে ভালো চোখে দেখেননি তাঁরা। আরএসএস যেখানে রোল মডেল হিসাবে রাম-সীতাকে তুলে ধরে সেখানে শোভন-বৈশাখীতে প্রবল আপত্তি ছিল তাদের। এমনকী গেরুয়া ব্রিগেডের একাংশ 'ঘর ভাঙানি মহিলা' বলতেও রেয়াত করেননি বৈশাখীকে।
৭ ঘরেই 'বিপদ বাড়ছে' শোভনের- দীর্ঘদিন ধরে নিজের ওরার্ডের বাসিন্দাদের খোঁজ নিতে যাননি প্রাক্তন মেয়র। যার জেরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কাউন্সিলর না থাকায় নানা কাজে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। খোদ এই অভিযোগ তুলেছেন শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। বিজেপিতে সক্রিয় হলেও 'এতদিন কোথায় ছিলেন' প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।
৮ 'ভাল-ডাল' গেলেই ভালো- এক বছর কেটে গিয়েছে। দলের জার্সি পরেও বিজেপিতে 'ফরেন বডি' হয়ে রয়ে গিয়েছেন মমতার একদা নয়নের মণি। লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর্ব শুরু করান মুকুল রায়। যদিও রাজ্য় রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বলছে,দলের ওপর গোঁসা করে এমনিতেই বিজেপি ব্রিগেডে নাম লিখিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতা। শুভেন্দুর পিছনের লাইনও নেহাত ছোট নয়। মুরলীধর স্ট্রিটে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে,জনসম্পর্ক বাড়াতে রাজনীতির ময়দানে নেমে কাজের লোক চাইছে পদ্ম শিবির। সেখানে বিতর্কিত কাউকে দলে রেখে সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নয় দল। তাই নিজেরা সক্রিয় না হলে, বিজেপিতে শোভনও যে 'বহিরাগত' হয়ে থেকে যাবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।