যত সময় এগোচ্ছে ততই যেন আরজি কর মেডিক্যালল কলেজ ও হাসপাতাল কাণ্ডে একের পর এক মোড় উঠে আসছে। সেইসঙ্গে তদন্ত যত এগোচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত সন্দীপ ঘোষের একের পর এক 'কীর্তি' তত সামনে আসছে। সম্প্রতী জানা গিয়েছিল, সন্দীপ ঘোষের ল্যাপটপে একাধিক নগ্ন পুরুষের ছবি পাওয়া গিয়েছে! আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ল্যাপটপ হাতে পেয়েছেন ED আধিকারিকরা। আর এই ল্যাপটপেই মিলেছে একাধিক নগ্ন পুরুষের ছবি। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি সন্দীপ ঘোষ সমপ্রেমী? কারণ আগেই ২০১৭ সালের হংকংয়ের একটি ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে সন্দীপ ঘোষ হংকংয়ের কুইন এলিজাবেথ হসপিটালের এক মেল নার্সের শ্লীলতাহানি করেছিলেন বলে অভিযোগ। এবার সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। মুর্শিদাবাদে থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একাধিক রূপান্তরকামীর নম্বর জোগাড় করতেন বলে অভিযোগ । ওই রূপান্তরকামীদের নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠাতেন ।
কী সেই অভিযোগ?
একসময়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। সেই সময় একাধিক রূপান্তরকামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করতেন ‘ডাক্তারবাবু’। সন্দীপের বিরুদ্ধে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রথম সারির এক যোদ্ধার। পেশায় নেতৃশিল্পী কাজী আলি আফতাবের অভিযোগ, সন্দীপ ঘোষ ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটিকে সম্মান করতেন না। তিনি একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতেন। তারপর তাঁদের উপর নির্যাতন করতেন। রবিবার তিনি রাখঢাক না করেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার জানা তিনজন রূপান্তরকামীর সঙ্গে সন্দীপ যৌন সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। এমনকী, চরম মুহূর্তে তাঁদের সঙ্গে পৈশাচিক, নৃশংস আচরণও করতেন। সে সময় ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে ভয় পেয়েছিলেন অত্যাচারিতরা। কারণ, উনি খুব প্রভাবশালী।’ তাঁর আরও অভিযোগ, বহরমপুরে থাকাকালীন অনেকের সঙ্গে অসভ্যতা করেছেন বলে ওঁর (সন্দীপ ঘোষ) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। উনি একজন সমকামী পুরুষ। মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করার সুবাদে উনি ফেসবুক থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের নম্বর জোগাড় করে তাঁদের ফোন করতেন। কোয়ার্টারে ডাকতেন। সেখানে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন। ওঁর যৌনতা ছিল বিকৃত প্রকৃতির। কামড়ানো, আঁচড়ানো, খামচে রক্ত বের করে দেওয়া প্রভৃতি করতেন। কোনও রূপান্তরকামী একবার ওঁর কাছে গেলে দ্বিতীয়বার আর ভয়ে যেতেন না। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রথম সারির ওই যোদ্ধা আরও বলেছেন, ‘আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করছে। সেই তদন্তে সন্দীপের এহেন আচরণকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে আমি আশা করছি।’
এখানেই থেমে থাকেননি আলি আফতার। তিনি বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে থাকার সময়ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সন্দীপ। এখানে যাঁদের সঙ্গে ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা কেউই থানায় যেতে পারেননি। কারণ, তাঁদের সেই অবস্থা ছিল না। একজন প্রভাবশালী আধিকারিকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে কে শুনবে? তাছাড়া থার্ড জেন্ডার কেউ যদি বলেন, তিনি ধর্ষিত হয়েছেন সেটা আমাদের এই সমাজে কেউ বিশ্বাসই করবে না!’ সন্দীপের এই নয়া কুকীর্তি ফাঁস করতে গিয়ে আফতাব জানিয়েছেন, ফেসবুক প্রোফাইলে ভালো ছবি দিয়ে বিভিন্ন সমকামীদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন সন্দীপ। কেউ অ্যাকসেপ্ট করলেই তাঁর সঙ্গে মেসেজে আলাপ জমাতেন। তারপর নম্বর বিনিময় করে সরাসরি কু-প্রস্তাব দিতেন। অনেকেই তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিতেন না। তাই পদ্ধতি বদল করে শুধু দেখা করার জন্য অনেককে ডেকে পাঠাতেন। কখনও নিজের ফ্ল্যাটে। আবার কখনও হোটেলে তাঁদের ডাকা হতো। এভাবেই পরপর তিনজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে অভিযোগ আফতাবের।
আরজি কর কাণ্ডে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই । বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ । ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ রয়েছে । এরই মধ্যে ধর্ষণ ও খুনের মামলাতেও সন্দীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই । এই মামলায় ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সিবিআইয়ের দাবি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে হংকং এর এক হাসপাতালের এক পুরুষ নার্স দাবি করেন, সন্দীপ ঘোষ তাঁর পোশাক পরিবর্তনের সময় ঘরে ঢুকে নিতম্ব স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করেন, 'ডু ইউ লাইক ইট'। সন্দীপের দাবি ছিল শোল্ডার ডিসলোকেশন কীভাবে ঠিক করতে হয়, তা শেখানোর সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর হাত ওই নার্সের নিতম্ব ছুঁয়ে যায়। তাঁর আরও দাবি, শোল্ডার ফিক্স করার পদ্ধতি শিখিয়ে তিনি বলেছিলেন 'ডু ইট লাইক দিস', সেটি নাকি ভুল বোঝেন ওই নার্স । এছাড়া, সন্দীপ ঘোষের ল্যাপটপ থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা একাধিক পুরুষের নগ্ন ছবি পেয়েছেন বলে খবর।