মহিলা শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় রাগ ও ক্ষোভের মধ্যেই কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজে বুধবার মধ্যরাতে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছদ্মবেশে একদল দুর্বৃত্ত হাসপাতালে প্রবেশ করে, যা ডাক্তার, রোগী, এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। প্রায় ৪০ জনের একটি দল হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হাসপাতালের দরজা-জানালা, বিছানা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং অন্যান্য সম্পত্তি ধ্বংস করে। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের ব্যারিকেড ভেঙে, সম্পত্তি নষ্ট করা হয় এবং কর্তব্যরত কর্মীদের মারধর করা হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিও তীব্র আকার ধারণ করেছে। তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে প্রমাণ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের সেমিনার হলেও ভাঙচুর চালানো হয়, যেখানে নির্যাতিতার সঙ্গে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। তবে কলকাতা পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে, সেমিনার হলটি অক্ষত রয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, হাসপাতালে প্রবেশকারী দুর্বৃত্তরা লাঠি, ইট, এবং রড নিয়ে এসেছিল, যা দিয়ে তারা হাসপাতালের সম্পত্তি ধ্বংস করে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে যাতে প্রমাণ নষ্ট হয়।
ঘটনার পর, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং মিডিয়ার ভুল প্রচারণাকে দায়ী করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, পুলিশ অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে এবং শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
অপরদিকে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সুহৃতা পালও ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানান, ভাঙচুর সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ড কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার পর, আন্দোলনরত চিকিৎসকরা হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আবারও ধর্মঘটে বসেন। তাঁরা পুলিশকে প্রশ্ন করেন, কীভাবে এত বড় একটি দল হাসপাতালে ঢুকতে পারল এবং এতক্ষন পর্যন্ত হাঙ্গামা চালাতে পারব। ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এবং পরিস্থিতি এখন আরও জটিল আকার ধারণ করছে।