কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর শুরু হওয়া প্রতিবাদ আজও থামেনি। গত ৯ আগস্ট ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কলকাতা হয়ে উঠেছে দেশজুড়ে চলা প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল। প্রথমে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ, তারপর ছাত্র সংগঠনগুলির প্রতিবাদ—একটি মর্মান্তিক ঘটনার জেরে শুরু হওয়া ক্ষোভের আগুন আজ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এই আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচটি নাম বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে: সায়ন লাহিড়ী, শুভঙ্কর হালদার, পলাশ ঘোষ, বলরাম বোস, এবং আখতার আলি। এই পাঁচজনই এই বিক্ষোভের মুখ হয়ে উঠেছেন, যাঁরা সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে প্রতিবাদের রূপ দিয়েছেন।
সায়ন লাহিড়ী: নবান্ন অভিযানের নেতা
সায়ন লাহিড়ী পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের সঙ্গে যুক্ত এবং নবান্ন অভিযানের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংযোগের অভিযোগ তোলা হয়েছে, সায়ন এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে তিনি MAKAUT থেকে MBA করছেন এবং যাদবপুরের শ্রী কলোনীর বাসিন্দা।
শুভঙ্কর হালদার: নবান্ন অভিযানে সক্রিয়
শুভঙ্কর হালদার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বর্তমানে বিএড করছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নবদ্বীপের বাসিন্দা শুভঙ্করও সায়নের মতো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। যদিও এই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত নয়, তবুও এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
পলাশ ঘোষ: ছাত্রদের মুখপাত্র
পলাশ ঘোষ হাওড়ার বাসিন্দা এবং নরসিংহ দত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাংলা সাহিত্যে অনার্স করছেন পলাশ, এবং তিনি "ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট সোসাইটি"র সঙ্গে যুক্ত। পলাশের মতে, তিনি শুধুমাত্র চিকিৎসকের বিচার দাবি করছেন এবং কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
বলরাম বোস: নবান্ন অভিযানে ভাইরাল হওয়া প্রতিবাদী
নবান্নের সামনে তেরঙ্গা হাতে জলকামানের মুখোমুখি হওয়া বলরাম বোসের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। বলরাম নিজেকে সনাতনী এবং শিবভক্ত হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, “এই আন্দোলন ছাত্রদের দ্বারা সংগঠিত হলেও প্রতিটি ঘর থেকে একজনকে এতে অংশ নিতে বলা হয়েছিল।” বলরাম বিশ্বাস করেন যে, “আমাদের কণ্ঠস্বর নবান্নে পৌঁছানো উচিত। নারীদের সম্মান না থাকলে সমাজ নিরাপদ নয়।”
আখতার আলি: আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট
আখতার আলি আরজিকর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন এবং তিনিই এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন। তিনি ডক্টর সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন, দাবি করেন যে সন্দীপ ঘোষ বেআইনি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আখতার আলি বলেন, “আমি রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তবুও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবর্তে আমাকে এবং তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বদলি করা হয়।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমি সব চেষ্টা করেছি কিন্তু ছাত্রদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।” এভাবেই এই পাঁচজন হয়ে উঠেছেন বাংলার বিক্ষোভের পোস্টার বয়, যারা মানুষের ক্ষোভকে প্রতিবাদের রূপ দিচ্ছেন।