আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নতুন মোড় নিচ্ছে। এই ঘটনার ময়নাতদন্তকারী ফরেনসিক চিকিৎসক ডা. অপূর্ব বিশ্বাস সম্প্রতি সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের পর বড়সড় দাবি করেছেন। তার কথায়, একজন ব্যক্তি যিনি নিজেকে নির্যাতিতার কাকা বলে দাবি করেছিলেন। এবং তাঁকে দ্রুত ময়নাতদন্ত করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি বলেছিলেন, “আজ যদি ময়নাতদন্ত না হয়, রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব।”
দ্রুত ময়নাতদন্তের জন্য চাপ
অপূর্ব বিশ্বাস দাবি করেছেন যে, নির্যাতিতার কাকা বলে দাবি করা সেই ব্যক্তি বারবার দ্রুত ময়নাতদন্তের দাবি করেন। তবে ডকুমেন্টেশন নিয়ে জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লাগে। ডাঃ বিশ্বাসের এই বক্তব্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চাপ এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেছেন যে, দ্রুত শেষকৃত্য করতে এবং ময়নাতদন্তে গাফিলতি করতে পুলিশ এবং রাজনীতিবিদরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। তার দাবি, পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন এবং শেষকৃত্য তাড়াহুড়ো করে সম্পন্ন হয়েছিল।
সিবিআই-এর তদন্ত ও পুলিশের গাফিলতি
এই ঘটনার তদন্তভার ১৪ আগস্ট থেকে সিবিআই গ্রহণ করে। এর আগে, কলকাতা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছিল। সিবিআই-এর দাবি, মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের জামাকাপড় ও অন্যান্য প্রমাণ গ্রেফতারের দু’দিন পর উদ্ধার করা হয়, যা পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করেছিল। সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে ভোর ৪:০৩ মিনিটে অপরাধস্থলে ঢুকতে দেখা গেলেও, প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহে পুলিশের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ।
মূল অভিযুক্ত ও ষড়যন্ত্রের তদন্ত
সিবিআই-এর সন্দেহ, প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় এবং সহ-অভিযুক্তদের মধ্যে একটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছিল। তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের মোবাইল ডেটা, সিসিটিভি ফুটেজ, এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এই ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছে সিবিআই। একই সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিবিআই-এর বক্তব্য ও কোর্টের সিদ্ধান্ত
সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, "আমাদের বিশ্বাস, এই অপরাধের পেছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।" তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা বেশিরভাগ অভিযোগ জামিনযোগ্য এবং তাকে গ্রেফতার করা অন্যায়।