রানি রাসমণি রোডে হাই কোর্টের নির্দেশের পর শুরু হয়ে গেল—'দ্রোহের কার্নিভাল'। লৌহকপাট সরতেই জনস্রোত ঢুকছে, ঢাকের তালে তালে নাচছে মানুষ। ঢাকের আওয়াজে, স্লোগানে ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠছে এই প্রতিবাদী মিছিল। অনেকেই ভাবছিলেন, পুজো মিটতে থিতিয়ে যাবে আরজি কর-এর বিচারের দাবি। কিন্তু সেই ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করর চিকিৎসকও তাঁদের সমর্থনে আসা বহু মানুষ। দাবি একটাই, নির্যাতিতাকে বিচার দিতে হবে।
‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এ যোগ দিতে কলকাতা ও তার আশপাশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে উপস্থিত হচ্ছেন। মহিষবাথান থেকে ঢাকিরা এসেছেন। যারা ঢাকের আওয়াজে গতি এনে দিয়েছে এই প্রতিবাদে। প্রতিবাদের মিছিলের সামনে লেখা রয়েছে ব্যানার—‘বিচার যখন প্রহসন, লড়াই তখন আমরণ’। ঢাকিদের ঢাকের বোল দ্রোহের কার্নিভালকে উজ্জীবিত করছে।
এই কার্নিভালের আয়োজন নিয়ে প্রথম থেকেই ছিল প্রশাসনের কড়া নজর। পুলিশের ব্যারিকেড ও লোহার শিকল দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছিল। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে সেই ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার নির্দেশ আসে, যা এই আন্দোলনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আদালতের নির্দেশের পর 'দ্রোহের কার্নিভাল'-এর আয়োজন করতে আর কোনও বাধা থাকে না। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, মানুষের যাতায়াতের জন্য কোনও গার্ড রেল বা ব্যারিকেড রাখা যাবে না, এবং যাঁরা এই কার্নিভালে যোগ দিতে চান, তারা নির্ভয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
কলকাতা পুলিশের কমিশনারের জারি করা ১৬৩ ধারার নির্দেশিকা, যা রাস্তায় প্রতিবাদ করতে বাধা সৃষ্টি করেছিল, সেটিও হাই কোর্টের নির্দেশে খারিজ হয়ে গিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, রাস্তার উপর থাকা সব গার্ড রেল এবং ব্যারিকেড সরিয়ে দিতে হবে। এর ফলে, কার্নিভালে যোগ দিতে আসা সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবেন না।
‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ন্যায়বিচারের দাবিতে সাধারণ মানুষকে একত্রিত করা। ‘বিচার যখন প্রহসন, লড়াই তখন আমরণ’—এই স্লোগানটি থেকেই বোঝা যায়, কার্নিভালটি শুধু উচ্ছ্বাসের জায়গা নয়, এটি এক প্রচণ্ড প্রতিবাদী মঞ্চ। বিচারপতি ও আইনজীবীদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবার অংশগ্রহণই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দ্রোহের কার্নিভালে পুলিশের কড়া নজর থাকা সত্ত্বেও হাই কোর্টের নির্দেশের পর পরিস্থিতি বদলেছে। মানুষের উচ্ছ্বাস, ঢাকের শব্দ, এবং স্লোগানের মাধ্যমে এক বিরাট আন্দোলনের সাক্ষী হচ্ছে কলকাতা। এই আন্দোলন শুধু দ্রোহের নয়, এটি এক সামাজিক পরিবর্তনের দাবিতে মানুষের উচ্ছ্বাসের প্রতীক বলে মনে করছেন অনেকেই।