আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তাররের ধর্ষণ ও খুনের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খোলনোচলচে পাল্টাতে ১০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। চলছে আমরণ অনশন। এহেন পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের পাল্টা ১৩ দফা দাবি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তার মধ্যে রয়েছে, ডাক্তাররা সুবিধা মতো সরকারি হাসপাতালে ডিউটি বদলে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতে পারবেন না।
ডাক্তারদের আন্দোলনে তোলপাড় রাজ্য। সরকারি হাসপাতাল তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতালেও শুরু হয়েছে আংশিক কর্মবিরতি। আন্দোলনতরত ডাক্তারদের সঙ্গে একের পর এক মিটিং করছে নবান্ন। কিন্তু এখনও অচলাবস্থা কাটেনি। রাজ্য সরকারের দাবি, ১০ দফার মতো ৭ দফা দাবি পূরণ হয়ে গিয়েছে। যদিও ডাক্তারদের দাবি, সরকার মিথ্যে কথা বলছে। সব মিলিয়ে দ্রোহ-কালের এই পরিস্থিতিতে পাল্টা ১৩ দফা দাবি নিয়ে আসরে কুণাল ঘোষ। কুণালের ১৩ দফা দাবিতে কী কী রয়েছে?
১) সব হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক। সঙ্গে তাঁদের ডিউটির সময় অনুযায়ী উপস্থিতি, রোগী দেখাটাও সুনিশ্চিত হোক।
২) সরকারি হাসপাতালের কাজ ফেলে, সুবিধে মতো ডিউটি বদলে বাকি সময় প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করা চলবে না।
৩) প্রেসক্রিপশনে একই গুণমানের কমদামী ওষুধের বদলে ওষুধ কোম্পানির প্রভাবে দামী ওষুধ লেখা চলবে না। জেনেরিক টার্মে ওষুধ লিখুন, কোম্পানির ব্র্যান্ড নয়।
৪) ওষুধ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ( পেস মেকারসহ) কোম্পানির স্পনসরশিপে অনুষ্ঠান, দেশবিদেশে ভ্রমণ চলবে না। ওঁরা সমাজসেবা করেন না। কমিশন, কাটমানির অভিযোগের বন্ধ/সুরাহা করতে হবে।
৫) কথায় কথায় বিভিন্ন পরীক্ষার নামে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কেউ যেন কমিশন না নেন।
৬) ডাক্তারদের ফি যাতে মানুষের নাগালে থাকে, তার কাঠামো চাই। প্রত্যেককে রশিদ দিতে হবে।
৭) হয় সরকারি, নইলে বেসরকারি বেছে নিন, দুটো একসঙ্গে কোনও নিয়ম দেখিয়ে চলবে না।
৮) সাধারণ মানুষের করের টাকার ভর্তুকিতে যাঁরা সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়বেন, তাঁদের সরকারি কাজেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারিতে পড়াদের কথা আলাদা।
৯) স্পেশালিস্ট, সিনিয়রদের ঠিকমত ডিউটি করতে হবে। লবি করে কলকাতা পোস্টিং বা জেলায় গেলেও কৌশলী রোস্টারে তিন/চার দিন কলকাতায় এসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চলবে না। জেলার হাসপাতালে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
১০) শূন্যপদ পূরণ হোক। পরিকাঠামো বাড়ুক। কিন্তু নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে রোগীবন্ধু রাখার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি ডাক্তারদেরও নিতে হবে। কারণ সরকারি কাঠামোতে দুর্বলতা দেখিয়ে রোগীকে বেসরকারিতে যেতে বাধ্য করা/টেনে দেওয়ার অভিযোগ আছে, বন্ধ করতে হবে এসব।
১১) বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তিতে বিপুল টাকা, পড়তে টাকা, সেমিস্টারে ফেল করিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে পাশ- এইসব অভিযোগবন্ধনীতে কিছু ডাক্তারও আছেন। এসবে স্বচ্ছতা ও তদন্ত দরকার।
১২) বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিছু কোটা দীর্ঘকাল আছে। মুখ্যমন্ত্রীর কোটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ করেছেন। কিন্তু হাসপাতালের কোটাগুলি নিয়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ, বহু ডাক্তার জানেন, সেগুলি বন্ধ হোক বা স্বচ্ছতা আনা হোক।
১৩) চিকিৎসার গাফিলতিতে নির্দিষ্ট FIR বাধ্যতামূলক হোক।
কুণালের কথায়, 'যাঁরা আন্দোলন করছেন শুধু সুরক্ষা-সুরক্ষা করে। রোগীদের সুরক্ষা, মানুষের সুরক্ষাও প্রয়োজন। কয়েকজন বর্ষীয়ান ডাক্তার নমস্য। কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁরা সরকারি হাসপাতালে মানুষদের বঞ্চিত করে প্রাইভেট হাসপাতালে ডিউটি করেন। তাঁদেরও ভেবে দেখতে বলব।'