আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নির্যাতিতার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে অ্যাকশন মোডে সুপ্রিম কোর্ট। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃতার নাম, পরিচয়, ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁদের তিরস্কার করেছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। নাম, পরিচয় প্রকাশ যেন কেউ না করে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া মৃতার পরিচয় সামনে এনে ভুল করেছে। সেই সব প্ল্যাটফর্ম থেকে অবিলম্বে নির্যাতিতার নাম, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সব মুছে ফেলা উচিত। ২০১২ সালের দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার আসল নামের পরিবর্তে তাঁকে নির্ভয়া নামে ডাকা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন কেউ ধর্ষণের শিকার হলে তাঁর নাম কি প্রকাশ করা যায়? নাম প্রকাশ করলে কি সাজা হতে পারে? জেল হলে তা কত বছরের জন্য হয়?
ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতার (BNS) ৭২ নম্বর ধারায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। কেউ ধর্ষণ বা যৌন নিপিড়নের শিকার হয়েছেন, এমন কারও নাম, পরিচয় যদি কোনও একজন প্রচার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয় বা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যবহার করে তাহলে সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দোষী বলে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা এবং এক মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত জেলের সাজা হতে পারে। প্রসঙ্গত, BNS-এ ৬৪ থেকে ৭১ নম্বর ধারায় মহিলা ও শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৭২ নম্বর ধারায় সাজার কথা বলা হলেও এই ধারাতেই আবার ব্যতিক্রম নিয়মের কথাও বলা হয়েছে। ব্যতিক্রম নিয়মের ক্ষেত্রে আবার নির্যাতিতার নাম, পরিচয় প্রকাশ করলেও সাজা হয় না। ওই ধারায় উল্লেখ, নির্যাতিতার পরিচয় তখনই প্রকাশ করা যেতে পারে, যখন তা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র দায়রা জজ বা তার থেকে বড় কোনও কোর্টের কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। আবার সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছিল, ধর্ষণের শিকার যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং নিজের ইচ্ছায়, কোনও চাপ ছাড়াই তাঁর পরিচয় প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে এই বিষয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকতে পারে না। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল নিগৃহীতারই রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের হাথরস মামলায়ও কেউ কেউ নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করেছিল। যা নিয়ে রুষ্ট হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাদের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল, মৃত্যুর পরও নির্যাতিতা বা তাঁর পরিবারের মর্যাদার সঙ্গে আপস করা যাবে না।
পরিচয় প্রকাশিত হলে নির্যাতিতার পরিবার অসুবিধেয় পড়ে সেই উদাহরণ সুপ্রিম দিয়েছিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অনেকে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। নির্যাতিতা চেয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটা সত্যি।
নির্যাতিতার নাম, পরিচয় যাতে সামনে না আসে সেজন্য পুলিশের জন্যও আলাদা নির্দেশিকা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র যাতে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করে ও নির্যাতিতার পরিচয় যেন সামনে না আসে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিচয় রক্ষার জন্য এক্স বা অনুরূপ নাম যেন ব্যবহার করা হয়, সেই নির্দেশিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের।