সংগ্রামের আরেক নাম মনোরঞ্জন ব্যাপারী। একথা নিঃসন্দেহে বলাই যায়। তৃণমূল বিধায়কের থেকেও তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় হল, একজন সাহিত্যিক। যাঁর লেখায় পরতে পরতে উঠে আসে দলিত, দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। এহেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Byapari) 'সাহিত্য আজতক কলকাতা ২০২৩' (Sahitya Aaj Tak Kolkata 2023) মঞ্চে বললেন, 'আমি খুন করতে পারি না। তাই লিখি।'
শরণার্থী ক্যাম্পে না খেতে পাওয়া, বোনকে না খেয়ে মরতে দেখা একজন মানুষ মনোরঞ্জন ব্যাপারী। মনের জোর যে মানুষকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া মনোরঞ্জন তাহলে কেন রাজনীতিতে এলেন? কেন রাজনীতিতে ও কী ভাবে? নিজেকে রাজনীতিবিদ না লেখক, কী হিসেবে ভাবতে ভাল লাগে? মনোরঞ্জন ব্যাপারীর কথায়,'আমি যখন লিখতাম, মানুষের চোখের জল বিক্রি করতাম। এক মা তাঁর ক্ষুধার্ধ শিশুকে স্তনদান করছেন, সেই ছবি তুলে আমার একজন ফটোগ্রাফার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন সেই ছবি। মানুষের দুঃখ দুর্দশা লিখে আমিও বই বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। খুব খারাপ লাগছিল আমার। কিন্তু রাজনীতিতে এসে আমি গরিব মানুষের পাশে থাকতে পারলাম। কিছু মানুষের দুঃখ দূর করতে পারছি। কিছু মানুষের চোখের জল মুছতে পারছি।'
কীভাবে একেবারে অক্ষর জ্ঞানহীন একজন মানুষ এত বড় মাপের লেখক হয়ে উঠলেন সেই কাহিনিও শোনালেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বললেন, 'লেখাপড়া শেখা শুরু করলাম জেলে। জেলের দেওয়াল ছিল আমার শ্লেট। তারপর জেল থেকে বেরনোর পর বই পড়া নেশা হয়ে গেল। যা পেতাম, পড়ে ফেলতাম। আজ দেশ অমৃতকাল পালন করছে। তখন আজও ৪০ কোটি লোক রাতের খাবার পায় না। জেল থেকে বেরিয়ে রিক্সা চালাতাম। আমার রিক্সায় একজন সওয়ারি উঠেছিলেন। ওই সওয়ারিতে জিগ্গেস করেছিলাম, জিজীবিষা মানে কী। তিনি বলেছিলেন, বাঁচার ইচ্ছা। ওই সওয়ারি ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। মহাশ্বেতা দেবীর পত্রিকায় প্রথমবার আত্মকথা লিখি। সেই শুরু। আজ পর্যন্ত ২৮টির বেশি বই লিখে ফেলেছি। ৫ ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।'
মনোরঞ্জন ব্যাপারীর কথায়, 'আমি খুন করতে পারি না। তাই লিখি। লেখার মাধ্যমে সমাজের নোংরা মানুষগুলোকে মারি। আমি যদি খুন করতে পারতাম, তা হলে লিখতাম না।'