সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই। এই নিয়ে বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বলা ভাল, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা নিয়ে ইডি এবং সিবিআইয়ের ‘হাত’ খুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, সিবিআই, ইডি এবং রাজ্য পুলিশ যে কেউ শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ৫৫ দিন ধরে বেপাত্তা শেখ শাহজাহান। আতঙ্কে রয়েছে সন্দেশখালি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করার ওপর আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। এবার আদালত জানিয়ে দিল, 'সিবিআই, ইডি বা রাজ্য পুলিশ, যে কেউ গ্রেফতার করতে পারবে শেখ শাহজাহানকে'। সন্দেশখালি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় এই নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিচারপতির মন্তব্য়, “আবারও বলছি, শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই।”
সন্দেশখালির একটি বিশেষ মামলায় বিষয়টি স্পষ্ট করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সন্দেশখালি মামলায় বেশ কিছু পরিবর্তন চেয়ে আদালতের দারস্থ হয় রাজ্য। সেই মামলায় এই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্দেশখালি মামলায় শেখ শাহজাহানকে নিয়ে বড় নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে দেয়, সন্দেশখালি মামলায় শেখ শাহজাহানকে যুক্ত করা হল। শেখ শাহজাহানকে পার্টি করার বিষয়টি ২টি সংবাদপত্রে নোটিস দিয়ে জানায় হাইকোর্ট। শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই বলেও জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্য পুলিশ, সিবিআই, ইডি-কেও মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের তরফে এজি বলেন, “নির্দেশে কিছু সংশোনের প্রয়োজন। ওঁকে দুটি মামলায় যুক্ত করতে হবে। অথচ, দুটি এফআইআরে স্থগিতাদেশ আছে। তাই সমস্যা হচ্ছে।” প্রধান বিচারপতি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “তার মানে আপনি জানেন উনি কোথায় আছেন?” বিচারপতির আরও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, “রাজ্য তার নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে থাকতে পারে না এই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে।” এজি বলেন, “না, সেটা নয়। এখনও গ্রেফতার ঘোষণা হয়নি।” প্রধান বিচারপতি ফের স্পষ্ট করে দেন, “শাহজাহানের গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই।” ইডি-র তরফ থেকে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, “ন্যাজট থানা তদন্ত করতে পারবে না। এতে সব প্রমাণ নষ্ট হবে। গ্রেফতার তদন্তের অংশ।” প্রধান বিচারপতির তরফ থেকে বলা হয়, “আমরা গ্রেফতারের কথা বলেছি। অনেকে বলেছেন হাইকোর্টের সুরক্ষা দিয়েছে। সেটা স্পষ্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফের স্পষ্ট করা হল জেলা পরিষদের সদস্য এভাবে কখনই পালিয়ে বেড়াতে পারে না।”
ইডি-র দাবি, রাজ্য পুলিশকে তদন্তভার দেওয়া হলে তথ্য প্রমাণ বিকৃত করবে। রাজ্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে তাকে লঘু ধারায় মামলা করা হবে এবং তার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। সিবিআই গ্রেফতার করলে কোনও অসুবিধা নেই। এরপরই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘হ্যাঁ , সিবিআই এবং ইডি যদি চায় তারাও গ্রেফতার করতে পারে।’ আদালতে ইডি-র সওয়াল, আগের যে ৪৩ টা মামলা রয়েছে সেখানে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। সেখানেও শেখ শাহজাহানের নাম রয়েছে। এই মামলায় কেন? এই মামলার শুনানির পর উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘মানুষের দ্বারা নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি কখনওই পালিয়ে বেড়াতে পারেন না। তিনি কখনই এড়িয়ে যেতে পারেন না। আইনকে অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখাতে পারে না। আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলছি যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির ওপর কোন স্থগিতাদেশ নেই আদালতের। কাল একটা খবর পেলাম যে অভিযোগের আগেই এইআইআর হয়েছে।’ প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যেপ পরই রাজ্যের এজির দাবি, ‘ওটা ক্লারিকাল মিসটেক’। প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের পুলিশের যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে গ্রেফতারে, হাইকোর্ট দেখেছে পুলিশ সংক্রান্ত মামলায় সকালে শাশুড়ি অভিযোগ জানালে বিকেলেই পুত্রবধূ গ্রেফতার হয়। প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘জেলা পরিষদে নির্বাচিত এক জনপ্রতিনিধি পালিয়ে বেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাজ্যের দেখানো নির্দেশনামা অনুসারে শাহজাহানকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই। এই মামলায় আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি।