সন্দেশখালির ঘটনায় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করল ইডি। নোটিসটি সমস্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিএসএফ-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালাতে যান ইডি আধিকারিকরা। তখন তাঁদের ওপরে হামলা হয়। সেই থেকেই খোঁজ নেই এই তৃণমূল নেতার। ইডির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট লুকআউট নোটিস জারি করেছে।
এদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন যে প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শাহজাহানকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেছে ইডি। তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি যে ইডি রাজ্য প্রশাসনকে শাহজাহানকে ধরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেছে। আমি প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি যে রাজ্য প্রশাসনকে না জানিয়ে যদি কোনও সংস্থা কিছু করে এবং লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং দরজা ভেঙে দেয়, এটি একটি দৃশ্যে পরিণত হয়। তারপরে হট্টগোল শুরু হওয়ার পরে ইডি পুলিশকে জানায়, তাদের শুরুতে এটি করা উচিত।'
শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে যায় ইডি। যদিও তিনি সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। তৃণমূল নেতার বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করায় ইডি আধিকারিকরা হামলার মুখে পড়েন। অভিযোগের তির স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও সমর্থকদের দিকে। জানা গিয়েছে, গতকাল ইডি অফিসারদের সঙ্গে মাত্র ২৭ জন সিআরপিএফ কর্মী ছিলেন। হামলায় তিন ইডি কর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে আক্রমণের সময় জনতা তাঁদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, নগদ এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ এই ঘটনায় তিনটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এ নিয়ে চিঠি দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার।
তদন্তের দাবি নিয়ে কুণাল বলেন, 'দল হিসেবে আমরা কোনও সংস্থা বা কোনও তদন্তের বিরুদ্ধে নই। আমরা দুর্নীতিকে সমর্থন করি না। তবে এজেন্সিগুলির বিশেষভাবে বিজেপির নির্দেশে টিএমসি নেতাদের হয়রানি করার জন্য কাজ করা উচিত নয় এবং স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে এলাকায় গিয়ে একটি দৃশ্য তৈরি করা উচিত নয়। স্থানীয়দেরও বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে টিএমসি নেতাদের বাড়িতে এজেন্সি পাঠাচ্ছে এবং তারপরে কেউ প্রতিবাদ করলে, তারা রাজ্যে গণতন্ত্র না থাকার কথা বলছে।'
কংগ্রেস বলেছে- বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত
এই ঘটনার পর একদিকে যেখানে বিরোধীরা রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানিয়েছে, অন্যদিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি সমস্ত সাংবিধানিক বিকল্প বিবেচনা করবেন এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি জানিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'ইডি অফিসারদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত মামলা। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ।'
বিজেপি কী বলছে?
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সন্দেশখালির ঘটনাটিকে ফেডারেল কাঠামোর উপর সরাসরি আক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিম জং-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। ইডি টিমের ওপর হামলার বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এতে রোহিঙ্গাদের হাত রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও বাঙালিদের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ইডি হামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক রাজ্যের ফেডারেল কাঠামোর ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।
যদিও তৃণমূল পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে। তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কর্তারা স্থানীয় জনগণকে উস্কে দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে যখন ইডি কর্তারা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহানের বাসভবনে অভিযান চালায় এবং শাহজাহানের সমর্থকদের আক্রমণের সম্মুখীন হন। সমর্থকরা অফিসারদের মারধর ও তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করে।