একে একে বন্ধ হয়েছে সব রুট। এখন চালু শুধু তিনটি রুট। ট্রাম নিয়ে শনিবার শিয়ালদা রাজাবাজার ডিপোয় প্রতিবাদ জানালেন শহরের কিছু মানুষ। তাঁদের দাবি, ওই রুটটি কলকাতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা বন্ধ রয়েছে, ওই রুট অবিলম্বে চালু করতে হবে।
১৫/১২ ট্রাম রুটটি শিয়ালদহ স্টেশনকে সূর্য সেন স্ট্রিট এবং মহাত্মা গান্ধী রোডের সঙ্গে যুক্ত করে। এবং হাওড়া ব্রিজের কাছে যায়। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে, ব্র্যাবোর্ন রোড ফ্লাইওভারের মেরামত কাজের কারণে এই রুটে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে দুর্গাপুজার পরে মেরামত শেষ হয়। কিন্তু ওই রুটে ট্রাম আর চালু হয়নি।
ট্রাম ব্যবহারকারীদের একাংশ বলেছেন যে, এই পথটি কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ, টাকি বালিকা বিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। কলেজ স্ট্রিট, চিৎপুর এবং বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম খরচে ট্রামে পণ্য বহন করতেন।
রুট চালু করার দাবিতে সরব হওয়া লোকজনেরা জানাচ্ছেন, এই রুটে ট্রাম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিকাঠামো, ওভারহেড তার এবং ট্র্যাক রয়েছে। পরিবহণ দফতর চাইলে ক'য়েকঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম চালাতে পারে।
কলকাতায় ট্রামের ১৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার এক বছরে পরিবহণ দফতর বিভিন্ন রুটে পরিষেবা কমিয়ে দিয়েছে এবং অন্য অনেকগুলিতে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। শহরে ১১৬ কিলোমিটারের বেশি ট্রাম ট্র্যাক রয়েছে কিন্তু ট্রামগুলি কেবল ৩৩ কিলোমিটারে চলে৷
৬টি বড় ট্রাম ডিপো ছিল। যার মধ্যে মাত্র ২টি রেখে বাকিগুলো বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। যেগুলিতে আবাসন তৈরি হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
২০১৭ সালে ২৫টিরও বেশি রুট চালু ছিল। এখন শুধুমাত্র তিনটি রুটে চলে — ৫ (শ্যামবাজার-এসপ্ল্যানেড), ২৫ (বালিগঞ্জ-এসপ্ল্যানেড) এবং ২৪/২৯ (বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ)।
শহরের রাস্তা থেকে ট্রাম কার্যত গায়েব হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট গত মাসে হস্তক্ষেপ করে। এবং রাজ্য সরকারকে "ঐতিহ্য পরিবহন" সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়। শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি শিবাগ্নানাম বলেন, “একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবহন বন্ধ করা খুব সহজ। তবে শহরের মানুষের অনুভূতির কথা বিবেচনা করে রাজ্যের উচিত দূষণমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।"