নিরীহ কয়েকটি বুকমার্ক। আর তা নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ সেখানে রয়েছে কিছু অপশব্দ বা গালাগালি। প্রকাশকদের দাবি, সেগুলি বাংলা ভাষার অংশ মাত্র। সেই শব্দ নিয়ে অন্যভাবেও গবেষণা করা যেত, মত বিশিষ্টদের।
বাংলা লিটল ম্যাগাজিন 'বোধশব্দ' এবং তাদের সহযোগী সংগঠন 'ছাপ' প্রকাশ করছে এগুলি। ছ'টা বুকমার্কের একটি সেট। যেখানে রয়েছে কিছু গালিগালাজ। উদ্যোক্তাদের দাবি, বাংলা ভাষার কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ। সেখানে তাঁরা জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করছেন। "প্রাকৃত বলুন, দেশী বলুন, অশুদ্ধ বলুন, ভাষা বলুন আর অপভাষাই বলুন, মাতৃভাষার ওই অংশেই আমাদের প্রাণপুরুষের পরিচয়।" ১৩২৩ বঙ্গাব্দে তিনি একথা বলেছিলেন। আর তাকে হাতিয়ার করেই এই বুকমার্ক ছাপানোর দিকে এগিয়েছেন তাঁরা। তবে তারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে বিভিন্ন বিষয়ে বুকমার্ক বানানো হবে।
'বোধশব্দ'এর সুস্নাত চৌধুরি বলেন, "বাংলা ভাষার কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ। ভাষা সব সময় পরিবর্তনশীল। আমরা ওই বুকমার্কে যে সব অপশব্দ বা স্ল্য়াং ব্যবহার করেছি, তার উৎস ও বিবর্তন সবই ধরার চেষ্টা করেছি। এবং সেগুলি জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের অভিধান থেকে নেওয়া। বাংলা ভাষা এবং ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে গুরুত্ব রয়েছে বলেই এই কাজ করেছি। তবে শুধুমাত্র গালাগাল বা অশুদ্ধ শব্দ নিয়ে নয়, আগামী দিনে অন্য বিষয়েও বুকমার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ভেবেচিন্তে সে কাজ করব।"
তিনি জানান, গালাগাল বা অশুদ্ধ শব্দ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিধান বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুমারেশ ঘোষের 'আড্ডার অভিধান', অভ্র বসুর 'বাংলা স্ল্যাং সমীক্ষা ও অভিধান', সত্রাজিৎ গোস্বামীর 'বাংলা অকথ্য ভাষা ও শব্দকোষ', সন্দীপ দত্তর 'স্ল্য়াঙ্গুয়েজ'।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভাষার যে কোনও অংশ তুলে ধরা যেতেই পারে। তবে এই জাতীয় শব্দ দিয়ে বুকমার্ক করাটা এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ না। আমি বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ওই বুকমার্ক দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তাই সেখানে ওই শব্দ ব্যবহার না করাই যেত। সামাজিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে ওই শব্দগুলি তো ব্যবহার হবে না। তিনি এই জাতীয় শব্দ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি আরও জানান, তবে যাঁদের পছন্দ হবে তাঁরা নেবেন, আর যাঁদের পছন্দ হবে না, তাঁরা নেবেন না।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলা আকাদেমির সামনে শুরু হতে চলা লিটিল ম্যাগাজিন মেলায় সেগুলি পাওয়া যাবে। বানিয়েছেন শিল্পী শৈবাল মুখোপাধ্যায় ও ছেপেছেন মুদ্রণশিল্পী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।