আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ- খুনের ঘটনার জেরে এখনও ধুন্ধুমার শহর- শহরতলি। জেলায় জেলায় বিক্ষোভ চলছে। সুবিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে, প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কর্মবিরতি চলছে এখনও। গর্জে উঠেছে দেশবাসী। এমনকী প্রতিবাদে সরব হয়েছেন প্রবাসীরাও। ৩১ বছর বয়সী মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুতে সরব সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা।
অপরাধীর শাস্তির দাবিতে মিছিল চলছে শহর জুড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষের গলায় শোনা যাচ্ছে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিবিআইকে আর জি করের তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার এই মামলায় স্বতপ্রণোদিত মামলা হাতে নেয় সর্বোচ্চ আদালত। তারই শুনানিতে এই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে তীব্র ভাবে ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হচ্ছে প্রায় সব মহল। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘুরছে বহু ভুয়ো তথ্য। কলকাতা পুলিশের তরফে বারবার সাবধান করা হচ্ছে, ভুয়ো তথ্য না ছড়ানোর জন্য। এরই মধ্যে নেটমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ঘুরতে থাকে একটি মেসেজ। যেখানে লেখা আছে, এবার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নীরব প্রতিবাদ স্বরূপ দুর্গাপুজোর জন্য যৌনপল্লীর মাটি দেবেন না যৌনকর্মীরা। এই খবরের সত্যতা যাচাই করতে বাংলা ডট আজতক ডট ইন-র তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় এক নিষিদ্ধপল্লীর এক কর্মীর সঙ্গে।
সোনাগাছির এই যৌনকর্মী বলেন, "এটা আজকের কথা নয়, বহু বছর ধরে মাটি দেওয়া হয় না। আমরা যৌন পেশার স্বীকৃতি আজও পাইনি। দীর্ঘদিন ধরে যৌন কাজের স্বীকৃতি চাইছি। যৌনকর্মী এবং প্রত্যকটা মহিলাদের বহু অপমান সহ্য করতে হয়। আমাদের প্রতি অত্যাচার হতেই থাকে। এখানকার মাটি নিয়ে শুধু বছরের এই চারটি দিন আমাদের আর সম্মান না করলেও চলবে। বছরের ৩৬৫ দিন আমাদের সম্মান দিতে হবে। যেদিন আমরা নিজেদের অধিকার পেয়ে যাবো, সম্মানিত হব, তখন আমরা মাটি দেব। তবে যদি কেউ এলাকা থেকে মাটি নিয়ে চলে যায় আমাদের না বলে, তাহলে তো কিছু করতে পারব না। আমরা এখনও পর্যন্ত স্বইচ্ছায় মাটি দিচ্ছি না।"
তিনি আরও বলেন, "এখন তো শুধু রথের দিন না, অন্য সময়ও নিতে চায় মাটি। তবে আজকাল ওটা ব্যবসার মতো হয়ে গেছে। শুনছি দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেটা আসল না নকল আমি বলতে পারব না। দোকানদার যৌনপল্লী থেকে নিয়ে যায় না কি, নিজের ব্যবসার জন্য অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসে, সেটা বলা সম্ভব নয়।"
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "১৪ অগাস্ট রাতে আমরাও প্রতিবাদে সামিল হয়েছি। তবে প্রত্যেকদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পাই কোনও না কোনও জায়গায় ধর্ষণ হয়েছে, মহিলাদের জ্বালানো হয়েছে, খুন করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমার বলতে চাই, এই ঘটনা যা ঘটেছে এগুলো এবার বন্ধ হোক। অনেক হয়েছে। আমরা মহিলারা প্রত্যেকটা জায়গায় শোষিত হতে থাকি। শুধু যৌনপল্লী না, গোটা ভারত জুড়ে বাড়ি, কল-কারখানা, সমস্ত জায়গায় মহিলারা যৌন হেনস্থার স্বীকার হতে থাকে। অনেকে বলতেও পারে না। বহু ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না।"
দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে নিষিদ্ধপল্লীর মাটি কেন লাগে?
পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই চরম ব্যস্ততা থাকে কুমোরটুলিতে। প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে, মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে নিষিদ্ধপল্লী থেকে মাটি নিয়ে আসতে হয়। এই মাটি ছাড়া দুর্গা মূর্তি তৈরি করা সম্ভব নয়। নিষিদ্ধপল্লীতে গিয়ে কোনও যৌনকর্মীর কাছে মাটি চাইতে হয় মৃৎশিল্পীকে। কোনও যৌনকর্মীর দরজায় দাঁড়িয়ে তাঁর হাত থেকে এই 'পূণ্যমাটি' সংগ্রহ করতে হয়। আগেকার দিনে পুরোহিত নিজে এই মাটি সংগ্রহ করতে যেতেন। এখন মৃৎশিল্পীরাই নিষিদ্ধপল্লী থেকে মাটি আনতে যান।