নিজের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলে এখন নিয়মিত তৃণমূল নেতাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন জহর সরকার। সোমবার দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলেরই রাজ্য সভার সাংসদ জহর সরকার। আর তার জেরেই মঙ্গলবার জহরবাবুকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র সৌগত রায়। এমনকী জহর সরকার চাইলে সাংসদ পদ ছেড়ে দিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন সৌগতবাবু। তবে দলের অন্দরে সমালোচনাতেও পিছু হটছেন না জহর সরকার। উল্টে তাঁর বক্তব্য, দলনেত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগ করতে তৈরি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল জেলে, তা নিয়ে যথেষ্টই বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্ব। এই আবহে জহর সরকার জেলে থাকা দুই তৃণমূল নেতার উদাহরণ টেনে বলেন, পচে যাওয়া অংশ বর্জন করতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, নিজের পরিবার এবং বন্ধুমহল থেকেও তাঁকে ক্রমাগত বলা হচ্ছে, ‘তৃণমূল ছেড়ে চলে এসো।’ প্রাক্তন আমলা জহরবাবুর এই বক্তব্য তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য। সৌগত রায় এই নিয়ে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন। দমদমের তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘ওর মতো স্বার্থপর লোক আমি দেখিনি। সাংসদ হওয়ার আগে একদিনও মিটিং মিছিলে দেখিনি। তৃণমূলের কোনও কর্মীর কোনও উপকার করেননি তিনি।’ তবে নিজের বক্তব্যে এখনও অটল জহর সরকার। উল্টে তিনি বলেন, ‘যিনি আমাকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি যদি ক্ষুব্ধ হন এবং চলে যেতে বলেন, পদত্যাগ করে চলে যাব।’’
প্রসঙ্গত দীনেশ ত্রিবেদীর ইস্তফায় খালি হওয়ার আসনে গত বছর জহর সরকারকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বরাবরই বিজেপির রাজনীতির বিরোধী। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির নানা সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। জহরকে রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন খোদ মমতা। তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণও করেছিলেন ভারত সরকারের প্রাক্তন আমলা। এদিকে জহরের বক্তব্য নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি।
বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালব্য টুইট করে লিখেছেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের পর, যখন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের মতো একজন বিরক্ত হন, তখন পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এটা কতটা খারাপ হবে, একবার ভেবে দেখুন। তৃণমূল সাংসদের পরিবারও চায়, তিনি চোর পার্টি তৃণমূল ছেড়ে দিক।'
সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক দাবি করেন জহর সরকার। তিনি বলেন, একপাশ পচা এই দল নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা অসম্ভব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত অবিলম্বে এদের বাদ দেওয়া।