আদিবাসীর অর্থ হল সেই ব্যক্তি যিনি প্রাচীনকাল থেকে কোনও একটি জায়গার বাসিন্দা। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তিনি কোন এলাকার বাসিন্দা তার সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্কিত। বহুদিন ধরে আদিবাসীরা বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত হতে থাকে। যেমন, ব্রিটিশ আমলে তাঁরা খ্রিস্টান ধর্মের দিকে ঝুঁকতে থাকে বা তাঁদেল বাধ্য করানো হয় সেই ধর্ম পালনে। আবার তার আগে ও পরে বহু আদিবাসী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, তারপরও আদিবাসীরা দাবি করে থাকেন তাঁদের আদি ধর্ম সারনা-কে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, বাংলা ও বিহার- এই ৫ রাজ্যের আদিবাসীরা সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবি করেন। এবার জানাব সারনারা কীভাবে অন্যান্য ধর্মের থেকে আলাদা? সারনা ধর্মে প্রকৃতির পুজা করা হয়। যেমন পাহাড়, নদী, চাঁদ, সূর্য। তাঁদের উৎসবের আলাদা ক্যালেন্ডার আছে। তাঁরা মূর্তি পূজাও কম করে। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ইত্যাদি উপলক্ষে তাদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। মৃত্যুর পরে দেহ দান করার পরিবর্তে, অনেক আদিবাসী মৃতকে তাদের বাড়ির কাছে সমাহিত করে। কিন্তু এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে বিভিন্ন সময় ধর্ম পরিবর্তিত হওয়ায় তাঁরা সেই ধর্ম পালন করে এসেছে।
হিন্দুদের সঙ্গে কী মিল? আদিবাসীরা বহু শতাব্দী ধরে শিবলিঙ্গের পুজো করে আসছে। শিব ও ভৈরব তাদের প্রধান দেবতা। শিবকে আদিদেব বলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে আদিবাসীদেরও শিবের নামে নামকরণ করা হত। হিন্দুদের মধ্যে শিব ও ভৈরবও পূজিত।
দেশের সংবিধানে কী আছে?
সংবিধানে তফসিলি উপজাতি বা ST দের হিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু অনেক আইন আছে যা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫ এর ধারা ২(২), হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬, এবং রক্ষণাবেক্ষণ আইন ১৯৫৬ এর ধারা ২(২) এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অভিভাবকত্ব আইন ১৯৫৬ এর ধারা ৩(২) তফসিলি উপজাতিদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর কারণ হল, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত শত শত গোত্র ও উপ-উপজাতির বিভিন্ন প্রথা রয়েছে।
তাহলে এই সারনা ধর্মবিধি কী?
শুমারির সময় প্রতিটি ধর্মের আলাদা আলাদা কোড থাকে। একইভাবে ঝাড়খণ্ড সহ আরও ৪ রাজ্যের আদিবাসীরা সারনা কোড দাবি করছে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার তা অনুমোদন করে, তাহলে সারনাও হিন্দু, মুসলিম বা অন্য ধর্মের মতো আলাদা ধর্মে পরিণত হবে।
কেন আলাদা ধর্মের দাবি ?
স্বাধীন ভারতে যখন প্রথম আদমশুমারি করা হয়েছিল, তখন আদিবাসীদেরকে তফসিলি উপজাতি বলা শুরু হয়েছিল। আর আদমশুমারিতে 'অন্যান্য' নামে ধর্মের একটি শ্রেণী তৈরি করা হয়।২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, দেশে তফসিলি উপজাতির জনসংখ্যা প্রায় ১০.৫ কোটি। আদমশুমারির সময়, ৭৯ লাখেরও বেশি লোক ছিল যারা ধর্ম কলামে 'অন্য' পূরণ করেছিল, তবে ৪৯.৫ লাখেরও বেশি লোক ছিল যারা নিজেকে 'সারনা' হিসাবে লিখেছিল।
এর মধ্যে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ছিলেন ঝাড়খণ্ডের। সারনা কোডের দাবিকারীরা যুক্তি দেখান যে, যখন ৪৫ লক্ষ জনসংখ্যার জৈন ধর্মের জন্য একটি পৃথক কোড আছে, তখন সারনা কোড তার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। একই সময়ে, আনুমানিক এক কোটি জনসংখ্যার গোন্ড এবং ভিল আদিবাসীদের সারনা ধর্ম কোডের দাবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ তারা নিজেদের আলাদা বলে মনে করে।
অনুমোদন কোথায় দেওয়া হয়েছিল? জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশন (এনসিএসটি) সারনা ধর্মকে আলাদা বিভাগ দেওয়ার কথাও বলেছিল। এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রের সম্মতির অপেক্ষা। অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এমনকী অনেক আদিবাসী নিজেদেরকে হিন্দু ধর্মের কাছাকাছি মনে করে। এমতাবস্থায় একটি নতুন ধর্ম গঠন তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে।
কেন্দ্রের মনোভাব কী? ঝাড়খণ্ড সহ ৪ রাজ্যের আদিবাসীদের আদমশুমারিতে আলাদা ধর্মের কোড দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র সরাসরি কোনও অবস্থান পরিষ্কার করেমি। এটা বিশ্বাস করা হয় যে একটি পৃথক ধর্ম কোড তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। এর ফলে সারাদেশে মানুষ বিভিন্ন ধর্মীয় বিধানের দাবি জানাতে শুরু করবে এবং অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।