অসহ্য গরম! টানা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে কলকাতা। বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৫ সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। এদিন আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই তাপপ্রবাহ চলবে। উত্তরবঙ্গের দুই জেলা— উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহেও তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারির পর সেখানে ভোটদানের হার কম হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।
তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়ে পাঁচ জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। এই জেলাগুলি হল ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমান। আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও খানিকটা বাড়বে। এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে পারদ আরও ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস চড়তে পারে।
২০১৬ সালে এ রকম তীব্র তাপপ্রবাহ দেখেছিল শহর কলকাতা। তার আট বছর বাদে আবার টানা খরতাপে নাজেহাল শহরবাসী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপৎকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে। বেড়েছে এসি, কুলার কেনার হিড়িক। রাস্তায় সরবত-লস্যির দোকানে ভিড়। কিন্তু কেন এ রকম ঘামহীন, কাঠফাটা গরম? আবহাওয়ার এই চরিত্র কতটা স্বাভাবিক? এত দিন গ্রীষ্মে শীতলতার ছোঁয়া আনত যে কালবৈশাখী, তারও দেখা নেই। কারণ কী?
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বললেন, 'জলাশয় কমেছে, গাছ কাটা বেড়েছে। প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে। কলকাতায় রাস্তা সম্প্রসারণের নামে গাছ কাটা হয়েছে। অকারণেও গাছ কাটা হয়েছে। ২০০৬ সালে সাড়ে ৬ হাজার জলাশয় ছিল কলকাতায়। এখন পুরসভা জানিয়েছে সাড়ে ৪ হাজার জলাশয় বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। বস্তি এলাকায় বহুতল তৈরি হয়েছে। তাপমাত্রা কমাতে পারে জল আর গাছ। কিন্তু দেদার গাছ কাটা আর জলাশয় বুজিয়ে ফেলার কারণেই গরম বাড়ছে। ১৫ বছর ধরে শাসকদল একটা নতুন পুকুর তৈরি করেনি। বরং বুজিয়েছে। তাপপ্রবাহ হতেই পারে, কিন্তু ভারসাম্য রাখতে সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।'
পরিবেশবিদ ড.স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বললেন, 'যে পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়েছে, সেটা বহুদিনের কাজের প্রভাব। আমরা বলছি 'এল নিনো'র জন্য হচ্ছে। আবহাওয়ার কিছু খামখেয়ালিপনা হতে পারে। কিন্তু আমাদেরও কিছুটা দায় থেকে যায়। পূর্ব কলকাতার জলাভূমির ঠিকঠাক মানচিত্র নেই। সেটা ছোট হচ্ছে কেন, সেটা জানার কোনও সঠিক উপায় মিলছে না। কোনও ম্যাপ নেই। সুন্দরবন কিছুটা সরে যাচ্ছে, ম্যানগ্রোভের প্রাচীর ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের যেটুকু জলাভূমি রয়েছে, তার কোনও ম্যাপিংয়ের ব্যবস্থা নেই। গোটা রাজ্যের জলাভূমি ও সবুজ এলাকার ম্যাপিং দরকার। শুধু চারটে গাছ লাগালেই হবে না।'