বিহার বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবকে ফোন করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বামেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরজেডি-র। তেজস্বীর সঙ্গে মমতার যোগাযোগ কি সেখানে কোনও ফাটল ধরাতে পারে? নতুন কোনও সমীকরণ তৈরি হবে?
মমতার ফোন করার বিষয়টি নিয়ে মাথাই ঘামাতে চায় না বামেরা। তৃণমূলকে তাদের কটাক্ষ, যারা ওই রাজ্যের ভোটে অংশই নেয়নি, তারা এখন লোক দেখানোর জন্য ফোন করছে। ফোন করার মধ্যে কোন অপরাধ নেই। তবে উনি ছাড়া তো আর কেউ ফোন করতেও পারবেন না। যিনি করবেন, তিনি দল থেকেই বাদ পড়বেন! রাজনৈতিক সম্পর্ক নির্ভর করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর।
তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপি-বিরোধীদের পাশে রয়েছেন মমতা। তাই তিনি তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ রাখেন।
শুক্রবার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এ ব্যাপারে জানান, বামেরা নির্বাচনে ওখানে অংশীদার। তাঁদের প্রমাণ করতে হয়নি আমরা আছি, চারটে ফোন করে সংবাদমাধ্যমে খবর দিতে হয়নি। যিনি নির্বাচনে অংশই নেননি, তিনি ফোন করেছেন, ভালই করেছেন। তবে তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই করার দরকার নেই। ফোন করবেন না কেন, ফোন তো করবেনই। নির্বাচনে বিজেপি জোট যাতে পরাস্ত হয়, সেই প্রক্রিয়ায় ছিল বামেরা। কে কী করবেন, দলে তার দায়িত্ব থাকে। রাজনীতির সম্পর্ক নির্ভর করে কর্মকাণ্ডের ওপর। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধ তো আছেই। তার জন্য কেউ কাউকে ফোন করবেন না, তা নয়। তবে ওখানে (পড়ুন তৃণমূলে) তো কারও কোনও দায়িত্ব নেই, সব উনি।
আরজেডি-র সঙ্গে আপনাদের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে? সঙ্গী হারানোর ভয় রয়েছে? এ ব্য়াাপরে তিনি জানান, না, কেন পড়বে? সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না। নিশ্চয়ই পড়বে না। পড়বে কেন? ফোন আছে, ফোন করবে। তবে ফোন করে লোককে জানালাম, দেখো ভাই ফোন করেছি, এটা কোনও কাজের কথা নয়।
সুজনবাবু জানান, সঙ্গী হারানোর ভয় তো ওঁর। সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, থার্ড-ইন-কমান্ড সবাই ছেড়ে যাচ্ছেন। এটা কি লোক দেখানো? তিনি বলেন, তা বলতে যাব না। মানুষ সব বোঝেন।
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক বিবেচনা বোধ এতো ঠুনকো নয়। রাজনীতিতে যোগাযোগ থাকবে, সৌভ্রাতৃত্ব থাকবে, একজন অন্যজনের খোঁজ নেবেন। তবে ব্যক্তিগত বিরোধ নয়। তৃণমূল সামাজিক বিভেদ তৈরি করে। ওটা ভুল পথ। এটা যেন সবাই খেয়াল রাখেন। ওঁর বেসিক নেচার হল বিরোধ। আর আমাদের সবার মত নিয়ে চলার চেষ্টা।
তৃণমূলের দাবি, দেশ থেকে বিজেপিকে সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়তে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সব বিরোধী দলকে একসঙ্গে আনার চেষ্টা করেছিলেন। বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয তাই ১:১ ফর্মুলা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে বিজেপি-বিরোধী একজন প্রার্থীই থাকবেন। বিজেপি-বিরোধী দল বা জোটের সঙ্গে তিনি সব সময় রয়েছেন। সেই বার্তা দিতেই তেজস্বী ফোন করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদলগুলিকে নিয়ে কলকাতায় সভার আয়োজন করেছিলেন মমতা। সেখানে প্রধান বিরোধী দল থেকে নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন তেজস্বীও।
এ রাজ্যে বামেদের সঙ্গে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডির সম্পর্ক বেশ ভাল। দীর্ঘদিন তারা বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তাদের দল থেকে বামফ্রন্ট মনোনীত দুজন প্রার্থী হয়েছিলে। এর আগেও তারা একসঙ্গে ভোটে লড়েছে।