চা আমরা প্রতিদিন খায়। আজকাল হার্বাল চায়ের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। অনেক রকমের চা বানিয়ে খাওয়া যায়। এরকম একটি জনপ্রিয় পানীয় হল নীল চা, যা ক্লিটোরিয়া টারনেটিয়া অর্থাৎ অপরাজিতা ফুল থেকে তৈরি এবং নীল রঙের। ওজন কমানো, শরীরকে ডিটক্সিফাই করা থেকে শুরু করে ত্বকের গঠন সমৃদ্ধ করা এবং চুলের বৃদ্ধি উন্নতি করা, এই পানীয়টি একটি আদর্শ স্বাস্থ্যকর পানীয়। প্রাকৃতিকভাবে ক্যাফিন-মুক্ত এবং সম্পূর্ণ ভেষজ তৈরি হওয়ায় গ্রিন টি-এর মতো নীল চাও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস।
বাড়িতেই বানিয়ে নিন
একটি পাত্রে বেশ কিছু অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি নিয়ে তাতে দু-তিনকাপ জন মেশান ৷ তাতে দিয়ে দিন শুকনো লেমন গ্রাস ৷ এরপর সেটি কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন ৷ এরপর তাতে আধ চা চামচ মধু যোগ করে গরম গরম খেতে পারেন।
নীল চায়ের উপকারিতা
হজম প্রক্রিয়া সহজ করে
এই চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা এটিকে আপনার ডিটক্স ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি আদর্শ পানীয় করে তোলে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা শরীরকে ফ্রি অ্যাকশন থেকে রক্ষা করে। সপ্তাহে এক বা দুবার খালি পেটে এক কাপ নীল চা পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় এবং হজমশক্তির উন্নতি ঘটে।
মেজাজ উন্নত করে
অপরাজিতা ফুলের চা এর স্বাদ মেজাজ-বর্ধক গুণমানের জন্য পরিচিত। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে এই চায়ের স্ট্রেস-বাস্টিং প্রভাব রয়েছে যা উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। এটি মনকে সতেজ করে, শক্তির মাত্রা এবং স্ট্যামিনা বাড়ায় এবং উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি দূর করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
এই পানীয়টি ক্যাফেইন মুক্ত এবং এতে শূন্য কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং কোলেস্টেরল রয়েছে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করার জন্য পরিচিত কারণ এটি কোনও খাদ্য বর্জ্য এবং অমেধ্য থেকে অন্ত্রকে শুদ্ধ করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে
নীল চায়ে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বিকাশ এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে৷ এক কাপ উষ্ণ নীল চা পান করা শরীর থেকে অপাচ্য খাদ্য কণা দূর করতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে
নীল চা আপনার চুলের যত্নের জন্যও একটি আদর্শ পানীয়। এটিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামে পরিচিত একটি যৌগ রয়েছে, যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং তাই একটি স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক বজায় রাখে।
প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করে
নীল চায়ে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মহিলাদের পিরিয়ড সম্পর্কিত সমস্যাগুলি যেমন ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে। এটি স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনও বাড়ায়। কারণ নীল চাকে শক্তিশালী কামোদ্দীপক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান
ব্লু টি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই সহায়ক প্রমাণিত হতে পারে। এর অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও নীল চায়ে প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এই চা শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে কাজ করে।
মেমরি বুস্ট করুন
আপনি নিশ্চয়ই অনেকবার শুনেছেন যে বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য বাদাম সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে মনে করা হয়। যদিও নীল চায়ে এমন অনেক গুণ রয়েছে, যা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক সাহায্য করতে পারে। এই চা মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক। আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও নীল চা খুবই উপকারী। এই চা পান করার পর, একজন খুব আরাম অনুভব করে।
সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নীল চা খুবই উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। এই চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
চোখের জন্য খুবই উপকারী
নীল চা পান দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের সমস্যাও প্রতিরোধ করে এই চা। এখন আপনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানো পর্যন্ত, প্রতিদিন নীল চা পান করার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।