সারা বিশ্বে প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ক্যান্সার শরীরের যে কোনো অংশকে তার শিকারে পরিণত করতে পারে। এটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে, তবে এমন একটি ক্যান্সারও রয়েছে, যা কেবল পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়, যা হল প্রোস্টেট ক্যান্সার।
৫০ বছরের বেশি বয়সী লোকেদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বা ঝুঁকি বেশি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সংখ্যা খুবই কম ছিল, কিন্তু গত ১০ বছর ধরে ক্রমাগত বাড়ছে। খারাপ জীবনধারা এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে এমনটা হচ্ছে।
প্রোস্টেট গ্রন্থি আমাদের শরীরের মূত্রথলির কাছে পেটের নীচের অংশে অবস্থিত। এই গ্রন্থি শুধুমাত্র পুরুষদের শরীরেই রয়েছে। এর কাজ হল কৃত্রিম তরল অপসারণ করা। এই তরলের সাহায্যে বীর্য নারীর জরায়ুতে পৌঁছায়। এই গ্রন্থি শুক্রাণুকে পুষ্ট করার পাশাপাশি বাঁচিয়ে রাখে।
প্রোস্টেট সরাসরি যৌন হরমোনের সাথে সম্পর্কিত। যাকে এন্ড্রোজেন বলে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোন স্পষ্ট কারণ নেই। এই সম্পর্কে অনেক তত্ত্ব বলা হয়েছে, কিন্তু কেন এটি ঘটছে সে সম্পর্কে তেমন কোন প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব পুরুষের এন্ড্রোজেন হরমোন বেশি থাকে তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। ছেলেরা যারা জিমে স্টেরয়েড গ্রহণ করে। তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকতে পারে। কারণ, জিমে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড দেওয়া হয়, যা অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের বিকাশ ঘটায়। এ বিষয়ে গবেষণা করা হলে দেখা যাবে অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
প্রোস্টেট ক্যান্সার ছাড়াও এর আরও দুটি রোগ রয়েছে। এগুলোকে BPH প্রোস্টেট (Benign prostatic hyperplasia) এবং প্রোস্টেটের সংক্রমণ বলা হয়। প্রোস্টেট সংক্রমণের লক্ষণগুলি এর ক্যান্সারের মতোই।
এটি পরীক্ষা করার জন্য একটি ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা করা হয়। এতে রেক্টরের মাধ্যমে প্রোস্টেট পরীক্ষা করা হয়। এর পর প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট (পিএসএ টেস্ট) করা হয়। আগে আমেরিকা ও ইউরোপে এই ক্যান্সারের ঘটনা দেখা গেলেও এখন ভারতেও এর ঝুঁকি বাড়তে শুরু করেছে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের এই লক্ষণগুলো হল, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, প্রস্রাব প্রবাহ হঠাৎ করে হ্রাস পাওয়া, কোমরের নীচের দিকে পিঠে এবং পেটে ব্যথা, হঠাৎ করে ওজন হ্রাস পাওয়া, প্রস্রাব বা শুক্রাণুর সঙ্গে রক্ত পড়া বা প্রস্রাবের সময় জ্বালা অনুভব করা। প্রস্রাবের সময় এই সমস্যাগুলি অনুভব করলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।