চকচকে জেল, গ্লসি শেডস আর ঝলমলে চার্মস—নখ এখন আর শুধু হাতের সৌন্দর্যের অংশ নয়, বরং ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যমও বটে। হরেক রঙের, হরেক স্টাইলের নেইল এক্সটেনশন করিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া কিংবা ইনস্টা রিলে তা শো অফ করার প্রবণতা এখন তুঙ্গে। সেলেব থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, সকলের মধ্যেই এর আগ্রহ প্রবল। নাইট ক্লাবে পার্টি হোক কিংবা বন্ধুর বিয়ে, সব অনুষ্ঠানেই নখ এক্সটেনশন করা চাই-ই চাই। তবে এই ফ্যাশনের ঝলকের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেগুলি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার করে সতর্ক করছেন।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাক্রেলিক নখ ব্যবহারকারীরা onycholysis নামের এক বেদনাদায়ক অবস্থায় ভুগতে পারেন। যেখানে নখ চামড়া থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিছু প্রোডাক্টে থাকা ফর্মালডিহাইড অ্যালার্জির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। ফলে পুজোর আগে যারা নেইল এক্সটেনশন করাবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, তারা আগেভাগে সাবধান হয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ট্রেন্ডে গা ভাসান।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা তৈরি করছে UV ল্যাম্প, যেটি দিয়ে জেল পলিশ শক্ত করা হয়। অতিরিক্ত এক্সপোজারে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি, নখে এক্সটেনশন থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে melanoma হতে পারে। তবে এটি ধরা পড়তে দেরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি।
এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘ সময় রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকায় পার্লার বা স্যালোঁর কর্মীদের শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন Trimethylbenzoyl diphenylphosphine oxide (TPO) নামের এক রাসায়নিক পদার্থ নিষিদ্ধ করেছে। যেটি সাধারণত জেল পলিশে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যানসারজনিত ও প্রজননের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে ভারত ও ব্রিটেনে এখনও নেইল এক্সটেনশন নিয়ে কোনওরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
সব নখ এক্সটেনশনে UV লাইট লাগে না। এখন পাউডার বা স্টিক-অন নখ পাওয়া যায়, যেগুলি এয়ার-ড্রাই হয়। এক্সটেনশন নখ দুর্বল হয় না। সমস্যা হয় ভুল পদ্ধতিতে তা লাগানো বা খোলার সময়। কিউটিকল অতিরিক্ত চাপা বা কেটে ফেলা বিপজ্জনক। এটি নখের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজে থেকে নখ খোলা বিরাট ভুল কাজ। এতে নখ ছিঁড়ে যাওয়া, রক্তপাত বা ব্যথা হতে পারে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পাতলা বা ভঙ্গুর নখে এক্সটেনশন এড়িয়ে চলুন। স্যালোঁর যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত কিনা খেয়াল রাখুন। দক্ষ টেকনিশিয়ানের কাছে কাজ করান, শুধুই কম খরচের জন্য ঝুঁকি নেবেন না।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি যখন নখ বা কিউটিকলের আশপাশে লালচে ভাব, ফোলা বা পুঁজ দেখা দেবে। জেল পলিশ দেওয়ার পর চুলকানি বা র্যাশ হলে, নখের রং ও টেক্সচারে হঠাৎ পরিবর্তন আসলেও ডাক্তার দেখান।
নখের যত্নে অতিরিক্ত লম্বা নখ না রেখে মাঝারি দৈর্ঘ্য বেছে নিন। নখ পরিষ্কার রাখুন এবং কিউটিকল অয়েল ব্যবহার করুন। ফাটল বা গ্যাপ হলে দ্রুত রিফিল করান। প্রতিবার সেশন শেষে হাত ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দু’তিনবার এক্সটেনশনের পর অন্তত ৩–৪ সপ্তাহ বিরতি নিন, যাতে নখ স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।
নেইল এক্সটেনশন নিঃসন্দেহে ফ্যাশনের অংশ, তবে স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সচেতন সিদ্ধান্তই ঝলমলে নখকে রাখবে নিরাপদ ও আকর্ষণীয়।