বাঙালির রান্না সচরাচর তেলে–ঝালে ভরপুর থাকে। সেদ্ধ খেলেও আমাদের তেল লাগে, স্যালাডেও লাগে। ভাজাভুজি–মাছ–মাংস হলে তো কথাই নেই৷ চিকিৎসকরা যতই দিনে ৩–৪ চামচ খাওয়ার কথা বলুন না কেন, সে লক্ষ্মণরেখা প্রায়শই পার হয়ে যায়৷ ফলত সমস্যাও বাড়ে৷ আবার শুধু যে বেশি তেল খাওয়া হয় বলে সমস্যা হয় তাও নয়, আমরা খাবারে কী ধরণের তেল ব্যবহার করি তার উপর আমাদের স্বাস্থ্য অনেকাংশে নির্ভর করে। শুধু তেলের প্রকারভেদই নয় এর পরিমাণ ও ব্যবহারের পদ্ধতিও স্বাস্থ্যের উপর দুর্দান্ত প্রভাব ফেলে।
সরিষার তেল ছাড়াও জলপাইয়ের তেল, নারকেল তেল এবং অ্যাভোকাডো তেলের মতো অনেক তেল রান্নায় ব্যবহৃত হয়। তবে এই সমস্ত তেলের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কুকিং অয়েল এক্সপার্ট লিজ ভেনানদি এবং দ্য বিগ বুক অফ হেলদি কুকিং অয়েল এর লেখিকা লিজা হাওয়ার্ড টাইম ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন কোন তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল এবং কোনটি খারাপ। আসুন এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক বিষদে।
অলভি অয়েল (এক্সট্রা ভার্জিন) - কুকিং এক্সপার্টরা অলিভ অয়েলে রান্না করা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিবেচনা করে থাকেন, বিশেষত এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেলে রান্না করা ভাল, কারণ এটি সম্পূর্ণ খাঁটি। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিশোধিত হয় না যার কারণে এটির গুণমান খুব ভাল। এটিতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কিছু পরিমাণে পলিউনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা হার্টের পক্ষে ভাল। অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না আলতো আঁচে করা হয়। লিসা হাওয়ার্ড বলেছেন যে অলিভ বেকিং এবং স্যালাড ড্রেসিংয়ের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত হয়।
নারকেল তেল- নারকেল তেলে হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়, তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের আলাদা আলাদা মতামত রয়েছে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল বলে বিবেচিত হয় ন, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে স্বাস্থ্যকর জিনিসগুলির সঙ্গে অল্প পরিমাণে এটি ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল হ্রাস করা যেতে পারে। লিজ ভেনান্দি বলেছেন, 'আমাদের দেহেরও কিছু পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রয়োজন। অতএব এটি অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। নারকেল তেলে সাধারণত হাই ফ্লেমে রান্না করা হয়।
সূর্যমুখী তেল- ভিটামিন ই সূর্যমুখী তেলে উচ্চ পরিমাণে পাওয়া যায়। এক চা চামচ সূর্যমুখী তেলতে ২৮ শতাংশ ভিটামিন ই রয়েছে। এর স্বাদ নেই, তাই রান্না করা খাবারে তেলের কোনও স্বাদ থাকে না । এটি উচ্চ তাপের রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এই তেলে ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড অধিক পরিমাণে থাকে। ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে প্রদাহ হতে পারে। যদি আপনি সূর্যমুখী তেলে রান্না করেন তবে আপনার ডায়েটে ওমেগা -৩ এর সাথে এটির ভারসাম্য রেখে করবেন।
ভজিটেবল অয়েল- উদ্ভিজ্জ তেল বা ভজিটেবল অয়েলের অর্থ উদ্ভিদের মাধ্যমে যে তেল পাওয়া যায়। কী পরিমাণ উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা হচ্ছে তা রান্নায় কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর ভজিটেবল অয়েলের ফায়দা নির্ভর করে। হাওয়ার্ডের মতে, উদ্ভিজ্জ তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিমার্জন করা হয় তাই এর স্বাদ এবং পুষ্টি কম থাকে। এটি শরীরে ভাল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে, তবে অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
অ্যাভোকাডো তেল- অ্যাভোকাডো তেলকে খুব স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। এটিকেও ভার্জিন অলিভ তেলের মতো পরিশুদ্ধ করা হয় না। এই তেল উচ্চ উত্তাপে রান্না করা হয়। এর স্বাদ খুব কম। এর তেলও অ্যাভোকাডোর মতো ক্রিমযুক্ত। অ্যাভোকাডো তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই রয়েছে এবং এটির দাম অন্যান্য তেলের তুলনায় বেশি।
পিনাট অয়েল- চিনাবাদাম তেল দিয়ে রান্না স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এটি স্বাদেও খুব ভাল। বিভিন্ন জাতের চিনাবাদাম তেল রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। স্বাদের পাশাপাশি এর সুগন্ধও বেশ ভালো। এই তেলেও হাই প্লেমে খাবার রান্না করা হয়।
ক্যানোলা অয়েল- ক্যানোলা অয়েল সরিষার গাছ থেকেই আহরণ করা হয় এবং এতে আরও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং পলিউনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সঠিক পরিমাণে পাওয়া যায়। সমস্ত উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে ক্যানোলা তেলতে কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। এই তেলে উচ্চ তাপে রান্না করলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াজাত হওয়ার কারণে, অনেকে এটিকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন না।
আখরোট তেল- আখরোট তেলেতে স্মোকিং গুণমান কম তাই এটিতে রান্না করা সঠিক বলে মনে করা হয় না। এই তেলটি প্যানকেকস, তাজা কাটা ফল এবং আইসক্রিমের উপরে ব্যবহার করা হয়। কিছু লোক দুধ ও কফিরে সঙ্গে এটিকে পান করেন। আখরোটের তেলে ভাল পরিমাণে ওমেগা-৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে না।