বহু মহিলারাই যমজ সন্তানের (Twins) মা হন। আবার অনেকে একসঙ্গে তিন বা তার অধিক সন্তানের জন্ম দেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী একটি শুক্রাণু থেকে কেবল একটি শিশুর জন্ম হতে পারে। তাহলে কী দুটি শুক্রাণু থেকে যমজ সন্তান হয়? ডিম্বাশয়ে একটি শুক্রাণু প্রবেশের পর আর কোনও শুক্রাণু প্রাবেশ করতে পারে না। তাহলে কীভাবে হয় যমজ সন্তান? জানুন বিস্তারিত...
দু'ধরণের যমজ সন্তান হয়। একটি সনাক্তকারী অর্থাৎ আইডেন্টিক্যাল এবং আরেকটি অ-সনাক্তকারী যার অর্থ নন-আইডেন্টিক্যাল। চিকিৎসার ভাষায় এগুলিকে মনোজাইগোটিক এবং ডিজাইগোটিক বলা হয়। সাধারণত মহিলাদের শরীরের ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলনে একটি ভ্রূণ গঠিত হয়। তবে এই ফার্টিলাইজেশনের ক্ষেত্রে অনেক সময় একটি নয় দুটি ভ্রূণ গঠিত হয়।
যেহেতু এই ফার্টিলাইজেশন একই ডিম্বাণু থেকে হয়, তাই তাদের প্লাসেন্টা অর্থাৎ গর্ভপত্রও একই। এই পর্যায়ে দুটি ছেলে বা মেয়ের জন্ম হয়। সাধারণত তাঁদের চেহারা ও স্বভাবগত মিল থাকে এক্ষেত্রে। তাঁদের ডিএনএ-তেও খুব মিল থাকে। তবে তাঁদের আঙুলের ছাপ আলাদা। এই ধরণের শিশুদের মনোজাইগোটিক যমজ বলা হয়।
তবে কখনও কখনও এটিও ঘটে যে কোনও মহিলার দেহে একবারে দুটি ডিম্বাণু তৈরি হয়, যা ফার্টিলাইজেশনের জন্য দুটি শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়। এর ফলে দুটি পৃথক ভ্রূণ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নিজস্ব প্লাসেন্টা থাকে। এতে একটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তানও হতে পারে।এই ধরণের শিশুদের ডিজাইগোটিক বলা হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ৪০ টি প্রসব করা সন্তানের মধ্যে ১ টি যমজ শিশু জন্মায়। যার মধ্যে ১/৩ মনোজাইগোটিক এবং ২/৩ ডিজাইগোটিক। গবেষণা বলছে গত দুই দশক ধরে যমজ সন্তান জন্মের হার অনেক বেড়েছে। জানেন কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বেশীরভাগ মহিলারা অনেকটা দেরিতে মাতৃত্ব পছন্দ করেন। ৩০ বছরের অপরে থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায় বেশি। এছাড়াও আইভিএফ, কৃত্রিম প্রজনন- এই সমস্ত পদ্ধতির জন্যেও এটি ঘটে। সেক্ষেত্রে দুটির বেশী সন্তান প্রসবের সম্ভাবনাও থাকে।
এই সম্ভাবনা আরও বেশী থাকে যখন কোন ধরণের ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট করেন মহিলারা। এই ক্ষেত্রে হয় বাইরে থেকে কোনও ওষুধের সাহায্যে ডিম্বাণু উৎপাদন করা হয়। নয়, আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।
এবার প্রশ্ন ওঠে, কী করে বোঝা যায় ভ্রূণ ছেলে না মেয়ে যখন ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি এক? সাধারণত মহিলারা প্রেগন্যান্সির এক মাস পরে বিভিন্ন লক্ষণ বুঝতে পারে। ততদিনে গর্ভস্থ সন্তান, শরীরে প্রায় ৬ মিলিমিটার আকার নেওয়া শুরু করে, অনেকটা মটর দানার অর্ধেকের মতো। ভ্রূণের ঘাড়, হাত ও পা তখন আকার নিতে শুরু করে।
সেই সময় ভ্রূণের লিঙ্গ বোঝা যায় না। সপ্তম থেকে দ্বাদশ সপ্তাহে সাধারণত এটি বোঝা যায়। যদি XX ক্রোমোজম থাকে তাহলে কন্যা সন্তান এবং XY ক্রোমোজম থাকলে পুত্র সন্তান হয়। এক্ষেত্রে জিন ও হরমোনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী হওয়ার ষষ্ঠ থেকে সপ্তম সপ্তাহে ভ্রূণ ১ সেন্টিমিটার আকারের হয়, যেটি একদমই একটি মটর দানার সমান। এই সময় যৌন গ্রন্থিগুলি তৈরি হয়। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায় যৌন গ্রন্থি একই থাকে। গর্ভস্থ সন্তানের যৌনাঙ্গ গঠন হওয়া শুরু হয় নবম সপ্তাহ থেকে।
নবম সপ্তাহের আগে অবধি আলট্রা সাউন্ডের মাধ্যমেও এটি দেখা যায় না। যে সমস্ত দেশে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনী নয়, সে সব জায়গায় চিকিৎসকেরা দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ সপ্তাহে এটি জানাতে পারেন।
তবে এই প্রক্রিয়া যাঁদের ঠিক মতো সম্পন্ন হয় না, সেই ভ্রূণর XX ক্রোমোজম থাকা সত্ত্বেও ছেলে ও মেয়ে উভয়ের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। একে 'ইন্টারসেক্স' বলে।