যৌন সংক্রামক রোগ (Sexually Transmitted Diseases/ STD) হল এমন একটি সংক্রমণ যা যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ এসটিডি-তে সংক্রামিত হয়েছেন। যদিও যৌন সংক্রমণজনিত রোগে অনেকেই আক্রান্ত হন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এটি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে এসটিডি সম্পর্কিত কিছু বিশেষ তথ্য জানা সকলের জন্য জরুরী।
যে কোনও যৌন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মহিলাদের অনেক বেশী। মহিলাদের যৌনাঙ্গ, পুরুষদের থেকে অনেক বেশী সংবেদনশীল হয়। ফলস্বরূপ এক্ষেত্রে মহিলারা আক্রান্ত হন বেশী।
এই ধরণের রোগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ এই সংক্রামক রোগ আরও গুরুতর রোগে পরিণত হতে পারে। এ কারণেই অনেক মহিলা পেলভিক অর্থাৎ শ্রোণীর প্রদাহজনিত রোগে ভোগেন। তবে যৌন সঙ্গমের সময় কন্ডোম ব্যবহারে এই এসটিডি-গুলির ঝুঁকি হ্রাস পায়।
শুনলে অবাক লাগলেও, আসলে প্রায় ৩৫ রকমের যৌন সংক্রামক রোগ আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হারপিস, হেপাটাইটিস, হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV)। তবে এর মধ্যে এরকম বহু রোগ আছে, যেগুলি যৌন সঙ্গম থেকে না, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
যৌন সংক্রামক রোগের সঠিক চিকিৎসা না করলে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত হতে পারে। ফ্যালোপিয়ান টিউবে গনোরিয়া এবং ক্ল্যামিডিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি মহিলাদের বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে এবং এর কারণে গর্ভাবস্থায় সমস্যা হয়। এসটিডি-র কারণে শুধু মহিলা না, পুরুষদের মধ্যেও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। অতএব, আপনি যদি কোনও ধরণের সমস্যা অনুভব করেন তবে দ্বিধা না করে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
কিছু যৌন সংক্রামক রোগ উপসর্গহীন। যার অর্থ, এই রোগ কোনও রকম লক্ষণ ছাড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারে যে কোনও ব্যক্তির শরীরে। আরও একটি সমস্যা হল, এই ধরণের রোগের ক্ষেত্রে সব সময় কোনও সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় না। যার ফলে রোগ নির্ধারণ করতে সমস্যা হয়।
এই ধরণের যৌন রোগ এড়াতে কন্ডোম ব্যবহারই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। তবে এতে ১০০ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমবে, তা কিন্তু নয়। তবে ঝুঁকি অনেক কমে, তাই অবশ্যই কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত যৌন সংক্রামক রোগের। হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি -র মতো একাধিক রোগ,মায়ের থেকে নবজাত শিশুদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এর ফলে সন্তান জন্মানোর সময়, সদ্যোজাতর ওজন কম হয় কিংবা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সে জন্মায়।
প্রেগন্যান্সির সময়ই যৌন সংক্রামক রোগ ধরা পড়লে, তার চিকিৎসা সম্ভব। যদি সেটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সেই মতো চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেন।