বিগত কয়েক দশকে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে কেটো ডায়েট। চটজলদি ওজন কমাতে অনেকেই আজকাল বেছে নিচ্ছেন এই বিশেষ ডায়েট প্ল্যান। কিন্তু কী এই কেটো ডায়েট?
কেটো শব্দটির উৎপত্তি কিটোন বডি থেকে। শরীরে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটের জোগান থাকে না, তখন শরীরে জমে থাকা ফ্যাটের দহনে প্রচুর পরিমাণে কিটোন বডি উৎপন্ন হয়। এই কিটোন বডি-ই তখন হয়ে ওঠে শরীরে শক্তি জোগানের একমাত্র উপায়। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে ফ্যাটের দহন হতে থাকায় ওজন কমতে শুরু করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই।
কেটো ডায়েট প্ল্যান অনুযায়ী, দৈনিক খাদ্য তালিকায় মাত্র ৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৭৫ শতাংশ ফ্যাট আর ২০ শতাংশ প্রোটিন থাকবে। এর চেয়ে বেশি কিছু থাকা চলবে না। এই ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেটকে ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ হিসাবে দেখিয়ে একে খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণ (৯৫ শতাংশ) বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট হল অত্যন্ত জরুরি একটি খাদ্য উপাদান।
শরীরের সব অঙ্গগুলিকে সচল রাখতে ফ্যাট, প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফ্যাট, প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেটকে একত্রে বলা হয় ম্যাক্রো উপাদান। এই ম্যাক্রো উপাদান শরীরে নিজে তৈরি করতে পারে না, খাদ্যের মাধ্যমে এর জোগান দিতে হয়। ফলে দীর্ঘদিন কার্বোহাইড্রেটের অভাবে শরীরে মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকিও তৈরি হয়। এ বার জেনে নেওয়া যাক কেটো ডায়েটের মারাত্মক ক্ষতিকর ৬টি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে...
১) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস: দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে মস্তিস্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্রমশ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে শরীরও তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যক্তি কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
২) স্মৃতিশক্তি লোপ পায়: স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে প্রয়োজন সেরোটোনিন নামের বিশেষ উপাদান যার জোগান মেলে কার্বোহাইড্রেট থেকে। দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে কার্বোহাইড্রেটের অভাবে সেরোটোনিন উৎপন্ন হতে পারে না। ফলে স্মৃতিশক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩) প্রোটিন ও ফ্যাট নিজস্ব স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাতে পারে: প্রোটিন আর ফ্যাট থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে বাধা দেয় কার্বোহাইড্রেট। ফলে ফ্যাট আর প্রোটিন তার নিজস্ব কাজ স্বাভাবিক ভাবে করতে পারে। দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে প্রোটিন আর ফ্যাটের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪) ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়তে পারে: দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে শরীরে গ্লুকোজ ভারসাম্য বিগড়ে যায়। ফলে মাথা চাড়া দেয় ডায়াবেটিসের সমস্যা।
৫) কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস: কেটো ডায়েটে অধিক মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু অধিক মাত্রায় প্রোটিন গ্রহনের ফলে ধীরে ধীরে কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে কিডনি বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
৬) নানা রোগের ঝুঁকি: দীর্ঘদিন কেটো ডায়েট মেনে চললে কার্বোহাইড্রেটের অভাবে শরীরে মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকিও তৈরি হয়। হজমের সমস্যা, অনিদ্রা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিসের সমস্যার মতো নানা সমস্যা মাথা চাড়া দেয়। লিভারও তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়।
ফলে শরীরের বাড়তি মেদ বা ওজন নিয়ে চিন্তা বাড়লে পুষ্টি বিশেষজ্ঞর বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েটে বাড়তি মেদ বা ওজন ঝরিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করাই ভাল। চটজলদি ওজন কমাকে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার দরকার কী!