অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে পেটে চর্বি জমা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটা বেশি করে দেখা যায়। বিদেশের তুলনায় এ দেশের নাগরিকদের ভুঁড়ি যেন একটা পরিচিতি হয়ে দাঁডিয়েছে। আরও একটি সমস্যা যেটা রয়েছে তা হল চুল পড়া। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। কিন্তু এটা কি জানেন যে পেটের চর্বির সঙ্গে চুল পড়ার পরোক্ষ যোগ রয়েছে? বিষয়টা শোনার পর একটু অবাক হলেও এটাই সত্যি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গ্যাসস্ট্রোটেরোলজিস্ট ডাঃ পালানিআপান মানিকম এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে ইনসুলিনের মতো বাড়তে থাকা কারণ যা পরিচিত হরমোন, এটি ইনসুলিন দ্বারা প্রভাবিত হয়, এটা চুল পরার কারণ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে মানিকম সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পোস্ট দিয়েছেন তা হল, ইনসুলিন-সদৃশ্য গ্রোথ ফ্যাক্টর (IGF-1) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা চুলের বাল্বের মূলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুল পড়া রোধ করে। তিনি এর সঙ্গে এও জানান যে এই হরমোনটি ইনসুলিনের মতোই আচরণ করে। যখন ইনসুলিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আইজিএফও (IGF) কাজ করে না আর যার ফলস্বরূপ চুল পড়তে শুরু করে দেয়।
অপরদিকে, ইনসুলিন শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা অগ্ন্যাশয় দ্বারা নিঃসৃত হয়। এটি যেকোনো মুহূর্তে আপনার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এটি লিভার, চর্বি এবং পেশীতে গ্লুকোজ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং প্রোটিনের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায় আইজিএফ, যার প্রধান কাজই হল গ্রোথ হরমোনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর মধ্যে শরীরের টিস্যু ও হাড়ের বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও এর ভূমিকা চুলের ফলিকলগুলির বিকাশের সময় সেলুলার বিস্তার এবং স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা বলেও জানিয়েছেন ডাঃ মানিকম।
এরপরই ডাঃ মানিকম বলেন, আমরা জানি যে পুরুষদের কোমরের পরিধি ৯০ সেন্টিমিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে তা পেটের চর্বিতে অবদান রাখে। আপনি যদি ভুঁড়ি দেখতে পান তবে ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে সেই ব্যক্তি চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। তিনি এর সঙ্গে এও পরামর্শ দিয়েছেন যে ইনসুলিন যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে ১৫০ মিনিট করে শরীরচর্চা করা খুবই প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মত, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণই হল অস্বাস্থ্যকর জীবন, যা চুল পড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আসলে চুল ঝরে পড়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ৷ অতিরিক্ত পেটের চর্বি ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) হরমোনের উচ্চ মাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা চুলের ফলিকলগুলিকে সঙ্কুচিত করতে পারে এবং এর ফলে চুল পড়ে।
বিশেষজ্ঞের মতে, ক্রমাগত অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং জীবনধারার কারণে পুষ্টিতে ঘাটতি হতে পারে, যেমন আয়রন এবং বায়োটিন, যা স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এই অভাবগুলি শরীরে দেখা দেওয়ার কারণে চুল দুর্বল, ভঙ্গুর এবং ঝরে পড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। অতএব, মানসিক চাপ চুল পড়ার একটি সাধারণ কারণ এবং অতিরিক্ত পেটের চর্বি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ চুলের বৃদ্ধির চক্রকে ব্যাহত করতে পারে এবং চুলের ক্ষতি হতে পারে। অতএব, যদিও পেটের চর্বি চুল পড়ার জন্য সরাসরি দায়ী না, এটি একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার লক্ষণ, যা চুল পড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। তবে সঠিক ওজন বজায় রাখা, সুষম ডায়েট এবং স্ট্রেসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে