মহাভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে যে জ্ঞান দিয়েছেন তা-ই গীতা নামে খ্যাত। শ্রীমদ্ভগবত গীতা হল শ্রী কৃষ্ণের মূল্যবান বাণীর সংগ্রহ। উপনিষদ ও ধর্মসূত্রের মতো গীতাও ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছিন্ন অংশ। তা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশে ও বিদেশে গীতার অনুরাগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ভাগবত গীতায় থাকা কিছু শ্লোক আপনাকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।
ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারম্ নাশানমাত্মনঃ।
কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তরমদেতাত্রয়ং ত্যজেত।
অর্থ- কাম, ক্রোধ ও লোভ। এই তিন অনুভূতিই একজন ব্যক্তির জন্য নরকের দরজা খুলে দেয়। তাই এই তিনটি পরিত্যাগ করা উচিত। এই শ্লোকের মাধ্যমে শ্রী কৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন, আমরা যদি কোনও লক্ষ্য অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের এই তিনটি অনুভূতি বা আবেগ চিরতরে ত্যাগ করতে হবে। যতক্ষণ এই তিন আবেগ আমাদের মনে থাকবে ততক্ষণ আমাদের মন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে থাকবে।
তানি সর্বাণি সংযম্য যুক্ত আসীত মৎপরঃ।
বশে হি যস্যেন্দ্রিয়াণি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠা।
অর্থ- শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন যে মানুষের উচিত সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা। কারণ কেবলমাত্র যাঁর ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাঁরই বুদ্ধি স্থির। যাঁর বুদ্ধি স্থির, সে-ই কেবল বড় জায়গায় পৌঁছতে পারে। জীবনের দায়িত্ব সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে পালন করেন। তাই ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে স্থিতধী হওয়ার দরকার। চট করে আবেগ দেখানো উচিত নয়। রাগ, দুঃখ ও আনন্দকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়।
নাস্তি বুদ্ধিরযুক্তস্য ন চাযুক্তস্য ভাবনা।
ন চাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্।
অর্থ- যে ব্যক্তির মন অর্থ, লালসা, আলস্য ইত্যাদিতে নিমগ্ন, তাঁর আত্মজ্ঞান নেই। আঁর আত্মজ্ঞান নেই সে কোনওভাবেই শান্তি পায় না। যাঁর মনে শান্তি নেই সে সুখ পাবে কী করে? তাই সুখ পেতে হলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা খুবই জরুরি। অকারণ ভাবনা থেকে মনকে দূরে রাখলেই শান্তি পাওয়া যায়।